দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না আয়। সরকারি কিংবা বেসরকারি যাইই বলুন না কেন বেতন বাড়ানোর দৌড়ে এটি একেবারেই শম্বুকগতি। আয় আর ব্যয়ের এই দোচক্করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। সাংসারিক কিংবা ব্যাচেলর জীবন যে ক্ষেত্রই বলুন না কেন আমাদের জীবনযাত্রা বেশ দোটানার মধ্যেই রয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনকে আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না, পারবেন না এড়িয়ে যেতে যুগের সাথে সাথে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের বিষয়টি। এই সবকিছুকেই নিয়ে আপনার এই হিমসিম অবস্থা এড়িয়ে যেতে হবে। মাসের খরচের টাকা উঠিয়ে তার উপর যদি মাসিক একটা অংশ ব্যাংকে জমা রাখতে না পারেন তবে সন্তানদের ভবিষ্যতের কি হবে কিংবা নিজের বিপদের সময় কি করবেন। এমতবস্থায় মাসিক খরচ থেকেই আপনাকে কিছুটা খরচ বাঁচিয়ে সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে মাসিক ব্যয় কমাবেন।
১। আপনার কর্মস্থলে যাওয়ার ক্ষেত্রে হাঁটার চেষ্টা করুন। কিন্তু তা যদি অনেক দূরে হয়ে থাকে তবে তো হাটা সম্ভব নয় এউ ক্ষেত্রে বিকল্প কিছু করার চেষ্টা করুন। বাস কিংবা অন্যান্য পাবলিক যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আজকাল পাবলিক বাসের যে অবস্থা অফিস পর্যন্ত যেতে যেতে আপনি এখানেই হিমসিম খেয়ে ফেলবেন। আজকাল বাইসাইকেল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলো দেখতে যেমন ফ্যাশেনেবল দামেও সাশ্রয়ী। কর্মস্থলে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাইসাইকেল ব্যবহার করতে পারেন।
২। বাসায় খাওয়ার চেষ্টা করুন। স্বামী স্ত্রী দুজনেই কর্মজীবি হলে বাইরের একবেলায় দুইজনের খাবারের খরচের কথা চিন্তা করুন। এটিকে কমিয়ে ফেলতে পারেন বাসায় খাবার খেয়ে। কিন্তু অফিস যদি অনেক দূরে হয়ে থাকে তবে বাসা থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারেন হটপটে করে। এতে বাইরের খাবারের খরচ বেঁচে যাবে।
৩। আপনার যদি বাইরে চা কফি খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে তবে তা বাইরে না খেয়ে ঘরে বানিয়ে খেতে পারে। এককাপ চায়ের বর্তমান ন্যূনতম দাম ৮ টাকা। প্রতিদিন এককাপ চা খেলে মাসিক খরচ হবে ২৪০ টাকা কিন্তু শুধু কি চা খাবেন চায়ের সাথে হালকা নাস্তা করতে গেলে খরচ বেড়ে যাবে আরো বেশি। তাই চা কফি বাইরে না খেয়ে বাসায় খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৪। বাজার কিংবা শপিং করার আগে একটি তালিকা করে নিন কি কিনবেন। কেননা বেশিরভাগ মানুষই বাজার কিংবা শপিং এ গিয়ে দিক হারিয়ে ফেলেন কোনটি প্রয়োজন আর কোনটি প্রয়োজন নয়। তাই দেখা যায় প্রয়োজনের জায়গায় অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি চলে আসে। যা খরচকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
৫। একটি বিষয় অবশ্যই মাসিক খরচ কমানোর জন্য বজায় রাখবেন তা হলো যদি আপনি কারো কাছে ঋণী থাকেন কিংবা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকেন তবে যত দ্রুত সম্ভব তা মিটিয়ে ফেলুন। কেননা এটি আপনার মাসিক খরচে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া সুদ বা মুনাফার পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
৬। দামী ব্র্যান্ড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। পোশাকের ক্ষেত্রে দামী ব্র্যান্ড না কিনে কমদামী কেনার চেষ্টা করুন। তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বছরের একটি সময় ছাড় চলে তখন কিনে ফেলার চেষ্টা করুন। যুক্তরাষ্ট্রে এটি খুব জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি।
৭। অপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করা এড়িয়ে চলুন। এমন অনেক পণ্যেই আমরা অনেক সময় ক্রয় করে থাকি যা কালেভদ্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন আপনার ঘরে যদি কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ থেকে থাকে তবে আপনার আরেকটি সনি ওয়াকম্যানের প্রয়োজন হচ্ছে না। আপনি ল্যাপটপ বা পিসিতেই গান শুনতে পারছেন।
৮। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় কিছুটা সচেতন হোন। আড্ডার খরচের ক্ষেত্রে সবাই মিলে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে একজনের উপর বেশি খরচ পড়ে যাবে না। আর সেই সকল বন্ধুদের এড়িয়ে চলুন যারা আড্ডা দেওয়ার সময় ঠিকই থাকবে কিন্তু খরচের ক্ষেত্রে কার্পণ্য দেখাবে।
৯। আপনার যদি ধূমপানের অভ্যাস থেকে থাকে তবে তা ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। ধূমপান ত্যাগ করা কষ্টের কিন্তু অসম্ভব নয়। ধূমপান ত্যাগ করতে পারলে আপনার অনেক খরচ বেঁচে যাবে। আরেকটি বিষয় সর্বদাই খেয়াল রাখুন বাচ্চাদের অযৌত্ত্বিক দাবি শুনে কোন কিছু কিনতে যাবেন না।
১০। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকল্প খুজে বের করুন। টিভি থাকলে পেপার বন্ধ করে দিন। বাইরে আয়রন না করে বাসায় নিজেই করার চেষ্টা করুন। দোকানে শেভের পেছনে খরচ না করে নিজেই বাসায় সেরে ফেলুন না। দেখবেন অনেক টাকাই আপনার সেভ হচ্ছে।
এই হল নিত্যদিনের মাসিক খরচ থেকে কিছুটা ব্যয় কমানোর সাধারণ পদ্ধতি। এর বাইরেও আপনি আরো কিছু বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার নিত্যদিনের মাসিক খরচ অনেকাংশে কমাতে পারেন। আশা করি এই পদ্ধতিগুলো আপনার মাসিক খরচ কমাতে অনেক সাহায্য করবে।