ডাঃ রিপন কুমার ঘোষ ॥ ঘাড়ে ব্যথা একটি বড় সমস্যা। হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠেই দেখা যায় ঘাড়ে ব্যথা হয়েছে। কিন্তু এই ঘাড়ে ব্যথার জন্য কি করা উচিত তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। আপনার ঘাড়ে ব্যথার ধরণ ও তার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিষয়ে আজকের এই আলোচনা।
এমন কোন লোক নেই যে, জীবনের কোনো না কোনো সময় ঘাড় ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন নাই। একেক বয়সে একেক রকম সমস্যার জন্য ঘাড় ব্যথা হতে পারে আবার বয়সের সাথে সাথে অন্য রকম সমস্যার কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। ঘাড় ব্যথার তারতম্য ও কারণ বয়সভেদে, পেশা ভেদে, লিঙ্গ ভেদে, ঋতু ভেদে, ভৌগোলিক অবস্থা ভেদে, শারীরিক পরিশ্রম ভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। অনেকের ঘাড় ব্যথার কারনে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে পিছিয়ে পড়েন ।
ঘাড় ব্যথার কারণ
ঘাড় ব্যথার নানাবিধ কারণ রয়েছে। যেমন -রোগীর ঘাড়ের অস্বাভাবিক অবস্থান যেটা হতে পারে কম্পিউটিং এর সময়, টেলিভিশন দেখার সময়, খেলাধুলা বা শখের কাজের সময়, শোয়ার সময় বালিশের ভুল ব্যবহার, অনেক সময় ঘাড়ে আঘাত পেলে, মাংসপেশী হঠাৎ ছিড়ে গেলে বা মচকে গেলে, সারভাইকাল স্পনডাইলোসিস,বা ঘাড়ের হাড়ের বা ডিস্কের সমস্যা, স্পাইনাল ক্যানেল স্টেনোসিস, সারভাইকাল স্পনডাইলোলিসথেসিস, সারভাইকাল রিব, সারভাইকাল ফ্যাসেট জয়েন্ট সিনড্রম, অ্যাকুয়াট টরটিকলিস, ভারটিবেরাল অ্যাট্যারি ইন সাফেসিয়েন্সি, নিউরাইটিস, বোন টি-বি, ঘাড়ে আঘাত বা ট্রমা, ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে গেলে, মাংসপেশীর সংকোচন ইত্যাদি ।
লক্ষণ
ঘাড় ব্যথার অন্যতম কারণ সারভাইকাল স্পনডাইলোসিস। ইহা ঘাড়ের হাড় ক্ষয়জনিত সমস্যা। ঘাড়ের হাড় ও হাড়ের মধ্যবর্তী ডিক্সে সমস্যা দেখা দেয়। চল্লিশ বয়শোর্ধ মানুষের মধ্যে এ সমস্যা অনেক বেশি। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। আমাদের দেশে এ সমস্যা আরও অনেক বেশি। তার কারণের মধ্যে রয়েছে অত্যধিক পরিশ্রম, ভার বা ওজন বহুশ্রমিক পেশাজীবী, কাজকর্মে বা চলাফেরায় অবস্থাগত ভুল, অপুষ্টিজনিত সমস্যা ইত্যাদি।
সাধারণত ঘাড়ের পিছন দিক থেকে ব্যথা শুরু হয়, সাথে ঘাড়ের মুভমেন্ট কমে যায়। অনেক সময় মাথা ব্যথা, কাঁধে ব্যথা পিঠের শীরদাড়ার পাসে বা হাতে ও ব্যথা হতে পারে। ব্যথা উঠানামা করতে পারে। হাতের মাংসপেশীতে ঝিম ঝিম বা শিন শিন জাতীয় বা কামড়ানো জাতীয় ব্যথা হতে পারে। রোগী ঘাড় ঘুরাতে গেলে ঘাড়ের নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যায়। ক্রমশঃ হাতের মাংসপেশীর শক্তি কমে আসে। হাতের মাংসপেশী শুকিয়ে যায়। রোগীর হাত ও ঘাড়ের কর্মক্ষমতা কমে আসে। ব্যথার কারণে রোগীর ঘুমের সমস্যা হয়। ব্যথা মাঝে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
চিকিৎসা
এ জাতীয় সমস্যা দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে যেখানে সেখানে চিকিৎসা না করে সঠিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পুরাপুরি সহায়ক। বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট ব্যথার ধরন অনুযায়ী কিছু ম্যানুয়াল টেস্ট ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট করে ব্যথার কারন ও উৎপত্তি বের করেন। সেই অনুযায়ী:
* প্রথমেই বিশ্রাম, সারভাইকাল কলার ও কিছু মেডিকেসন যেমন, মাসেল রিলাক্সযেন্ট, পেইন কিলার, ও কিছু মাল্টিভিটামিন দিয়ে থাকেন।
* সাথে কিছু পসচারাল ব্যামাম ও কিছু স্পেশাল মানুয়াল টেকনিক যেমন, মবিলাইজেশন, ম্যায়ফিসিয়াল রিলিজ, মাসেল এনার্জি টেকনিক, মুভমেন্ট উয়িথ মবিলাইজেসন ও মানুপুলেশন দিয়ে ব্যথা নিয়ন্ত্রন এ আনেন।
* এ ছাড়াও ব্যথার ধরন অনুযায়ী কিছু ইলেক্ট্রোথেরাপি ও ক্রায়োথেরাপি ব্যবহার করে থাকেন।
* সর্বোপরি কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া ও অপারেশন ছাড়াই রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলেন ।
পরামর্শ
নিম্নলিখিত উপদেশগুলো মেনে চললে ঘাড় ব্যথাজনিত সমস্যা অনেকাংশে লাঘব করা যায়। কখনো অতিরিক্ত ওজন মাথায় নেবেন না ,বা হাতে বহন করবেন না।শোয়ার সময় মাথার নিচে নরম ও হালকা বালিশ ব্যবহার করবেন। কম্পিউটিং, পড়াশোনা, লেখালেখি করার সময় চেয়ার ও টেবিল এর অবস্থান ঠিক করে নেওয়া। একটানা একদিকে বেশি সময় কাজ না করা। আঘাত ঘাড়ে পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন ও চিকিৎসকের নির্দেশমত ঘাড় ও হাতে স্টচিং বা ব্যায়াম করা। সর্বোপরি নিয়ম মত ব্যায়াম করুন ব্যথামুক্ত জীবন কাটান ।
# ডাঃ রিপন কুমার ঘোষ
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন
সমাজকল্যাণ মন্ত্রানালয়
স্পেশালাইসড ইন পেইন ম্যানেজমেন্ট