দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পাথরে বাজনা বাজে এমন কথা মনে হয় আগে আর কখনও শোনা যায়নি। তবে এবার শোনা গেলো পাথরে চমকপ্রদ বাজনা বাজে।
হয়তো খবরটি পড়লে যে কেও একটু আশ্চর্য হতে পারেন। কিন্তু ঘটনাটি আসলেও সত্যি। এমন একটি স্থানে পাথর রয়েছে যে সে পাথরের গায়ে আঘাত করলে তা কর্কশ শব্দে বাতাসে ভেসে ওঠে। কিন্তু এমন একটি পাথর যে পাথরে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে বাজনা বেজে উঠে! এরকম পাথরও রয়েছে? রিংগিং রক কাউন্টি নামে এই পার্কটি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভিনিয়া রাজ্যে অবস্থিত।
১২৮ একরের এই পার্কের ৭/৮ একর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই বিশেষ ধরনের পাথর। এসব পাথরকে আঘাত করলেই বেজে উঠবে বাজনা। আবার পাথরগুলোতে যদি কোনো হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা যায়, তবে তা ঝনঝন করে আওয়াজ হয়। ঠিক যেমনটা হয় কোনো ধাতুর তৈরি বস্তুতে আঘাত করলে ঠিক তেমনি।
মুখরোচক ওই খবরের আদি ইতিহাসও কিছুটা জানা গেছে। আমেরিকার আদিবাসীরা বহু প্রাচীনকাল হতেই এই পাথরগুলো সম্পর্কে জানতো। এখনও এই পাথরগুলোকে তারা অদৃশ্য শক্তি এবং ক্ষমতার প্রভাব রয়েছে বলে বিশ্বাসও করে। এরপর যখন শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারীরা আমেরিকাতে আসে, তখন তারাও আদিবাসীদের কাছে এই পাথরগুলো সম্পর্কে জানতে পারে।
ওই খবরে আরও জানা যায়, পাথরগুলোতে আঘাতের ফলে যে শব্দ সৃষ্টি হয়, তা এতটাই চমকপ্রদ, শুনলে কিছু সময়ের জন্য মনে হবে এই পাথরগুলো কি আসলেই পাথর? নাকি অন্যকিছু? এগুলো পাথরে সৃষ্ট শব্দ ধাতুর ঝনঝনানির মতোই। এসব ভুতুড়ে ঘটনা বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানী এবং ভূতত্ত্ববিদদের ধাঁধার মধ্যেই রেখেছে। রহস্য উন্মোচনের জন্য বহু গবেষণা করা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল কিছুই হয়নি, ফলাফল হযেছে শূন্য।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৯৬৫ সালের কথা। তখন পেনসিলভিনিয়ার রিচার্ড ফ্যাস নামে একজন গবেষক এই পাথরগুলো নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি গবেষণা করে দেখেন এককভাবে এই পাথরগুলো শব্দ তৈরি করে থাকে। যা আমাদের কান শুনতে পায় না। কিন্তু যখন অনেকগুলো পাথরে একসঙ্গে আঘাত করা হয়, ঠিক তখনই সেই টুং টাং শব্দ আমাদের কানে ধরা দেয়।
গবেষক রিচার্ড পাথরে সৃষ্ট শব্দের প্রকৃতি নির্ণয় করেছিলেন, কিন্তু এটা কীভাবে তৈরি হয় সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। এ পাথরগুলো আগ্নেয়গিরি হতে সৃষ্ট পদার্থ দিয়ে তৈরি। এ ধরনের আগ্নেয় শিলাকে ‘ডায়াবেস’ বলে। পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ‘ডায়াবেস’ আগ্নেয় শিলাভূমিই হচ্ছে এই পেনসিলভেনিয়ার রিংগিং রক। ভূ-বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, প্লাইস্টোসিন যুগে প্রায় ১২ হাজার বছর পূর্বে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে সৃষ্ট পাথর ভেঙে এই রিংগিং রকের সৃষ্টি হয়েছিল।
অন্যসব পাথরের মতো এসব পাথরেও রয়েছে লোহা এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ। কিন্তু ‘অতিরিক্ত কিছু একটা’ এসব পাথরে রয়েছে যে কারণে এরা সম্পূর্ণ আলাদা। অবশ্য কিছু বিজ্ঞানীর ধারণা মতে, পাথরগুলোর অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে এই অস্বাভাবিক শব্দ তৈরি হয়ে থাকে। তবে শুধু শব্দের জন্যই যে তা নয়, আরও কিছু কারণে এই পাথরগুলো আসলেও উদ্ভট। এই পাথরগুলো পর্বতের বরফ ধসের ফলে তৈরি হয়েছে, এমনটা মনে করেন অনেক গবেষক।
অদ্ভুত একটি বিষয় হচ্ছে, এই বিস্তীর্ণ প্রান্তরের অবস্থান পাহাড়ের পাদদেশে নয়, একটি পাহাড়ের উপরে। তাহলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, এই পাথরগুলো পাহাড় ধসের কারণে তৈরি হয়নি। তাহলে এই রহস্যময় পাথরগুলো এখানে এলো কোথা থেকে? সে রহস্য এখনও দুর্ভেদ্যই রয়ে গেছে। তবে ঘটনা যেভাবেই ঘটুক এগুলো দেখতে আসেন বহু দুর-দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীরা সঙ্গে হাতুড়ি বা লৌহ দণ্ড নিয়ে যান রিংগিং রক পার্কে। তখন রহস্যের কথা দর্শনার্থীদের মনে আসে না। তারা শুধু পাথরগুলোয় আঘাত করে সেই মধুর বাজনা বাজাতে থাকেন।