দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এমন কথা শুনে যে কেও বিস্মিত হতে পারেন। কিন্তু ঘটনাটি আসলেও সত্য। এক মহিলা শুধু চা-পানি খেয়েই পার করেছেন ৩৫ বছর!
বাঙালিদের কাছে ভাতের মর্জাদা অনেক। তাদের ভাত ছাড়া চলবে কি করে? কিন্তু ভারতের এক মহিলা ভাত না খেয়ে শুধু চা-পানি খেয়ে পার করে দিয়েছেন জীবনের ৩৫টি বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গোঘাটের বাসিন্দা অনিমা চক্রবর্তী। স্রেফ চা, পানি আর হরলিক্স খেয়েই দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন ষাটোর্ধ এই নারী। সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শেষ ৩৫ বছর চা-পানি আর হরলিক্স ছাড়া কিছুই খাননি অনিমা চক্রবর্তী।
তবে অনিমা চক্রবর্তীর জীবনকাহিনী একটু ব্যতিক্রমও বটে। ৪৫ বছর আগে স্বামীর সংসারে আসার পর হতেই দারিদ্র্য তাকে পিছু ছাড়েনি। অনিমা চক্রবর্তীর স্বামী গোপাল চক্রবর্তী ছিলেন একজন পুরোহিত। বিভিন্ন যজমানের বাড়িতে পূজা-অর্চনা করে কোনো মতে চলতো তাদের সংসার।
অনিমা চক্রবর্তীর স্বামীর কাজে সাহায্য করার জন্য, একসময় তাঁর নিজের গ্রাম হতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরবর্তী পাণ্ডুগ্রামে একটি বাড়িতে রাঁধুনির কাজ নেন। তবে তাতেও সংসারে সচ্ছলতা ফিরে না আসার কারণে দিনের বাকি অবসরে এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মুড়ি ভাজার কাজ করেন অনিমা চক্রবর্তী। হাড়ভাঙা এমন পরিশ্রমের কাজ করতে গিয়ে অনিমার খাওয়া-দাওয়া অনিয়মিত হয়ে যায়। এমন দিনও গেছে, যেদিন তিনি নিজে সম্পূর্ণ আনাহারে থেকেও পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন। এমন অবস্থায় যেদিন খাবার জুটেছে, ঠিক সেদিন হয়তো আধপেটা খেয়েছেন। এমনও সময় আছে টানা ৫ দিন কিছুই খেতে পারেননি তিনি। যে কারণে অনিমা হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ভাত, মুড়ি, রুটি যাই খান, তাতেই বমি হয়ে যায়। চিকিৎসকের কাছে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়ে দিলেন, পেটে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়েছে। এই রোগের চিকিৎসার সামর্থ্য তার ছিল না। যে কারণে বাধ্য হয়ে ভারি খাবার খাওয়া ছেড়ে দিয়ে শুধু তরল জাতীয় খাবার খেতে শুরু করেন অনিমা। এভাবে একসময় সেরে ওঠেন তিনি।
এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৩৫টি বছর। এতগুলো বছর ধরে দিনে একবার হরলিক্স, দুই কাপ চা, গ্লুকোজ বা পানি খেয়েই কেটেছে তার জীবন। এভাবেই অনিমা চক্রবর্তী ৩৫ বছর পার করেছেন শুধু চা-পানি খেয়ে।