দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় প্রদান করে। একাত্তরে শেরপুরে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতনের ভয়াবহ ও লোমহর্ষক ঘটনার অন্যতম হোতা ছিলেন মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। গত ১৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলাটির বিচার শেষ হয়। ওইদিন রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। কামারুজ্জামানের বিচারের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল-২-এ তিনটি ও ট্রাইবুনাল-১ এর ১টিসহ মোট ৪টি মামলার রায় ঘোষিত হলো।
এর আগে পলাতক আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিচার শেষে ২১ জানুয়ারি রায়ে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মামলার বিচারের রায়ে যাবজ্জীবন ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-২, এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-১, এ ছাড়া দুটি ট্রাইব্যুনালে আরও ৪টি মামলা বিচারাধীন। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিচার ১৭ এপ্রিল শেষ হয়েছে। যে কোনো সময় রায় ঘোষণা করা হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একেএম সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আসামি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ এবং ধর্ষণে সহায়তা, নির্যাতন, দেশান্তরসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে আনা ৭টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের দাখিলকৃত দালিলিক প্রমাণ এবং সাক্ষীদের জবানবন্দির মাধ্যমে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম তার সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের তিন বছরের বেশি সময়ে এ নিয়ে চতুর্থ কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হলো। এটিই জাতির কলঙ্ক মোচনের চতুর্থ রায়।
কি করেছিলেন কামারুজ্জামান
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। তার নেতৃত্বে ও সহযোগিতায় আলবদর বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনারা ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, দেশান্তরে বাধ্য করা, নির্যাতন, ধর্ষণ, ব্যাপক নিধনযজ্ঞ চালানো, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংঘটনের ষড়যন্ত্র, উস্কানি ও প্ররোচনা দেওয়া এবং উচ্চপর্যায়ের নেতা হওয়ায় সব ধরনের অপরাধের দায় রয়েছে। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে তার পরিকল্পনা ও পরামর্শে একাত্তরের ২৫ জুলাই ১২০ জন মুক্তিকামী নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয় এবং ওই গ্রামের প্রায় ১৭০ জন নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়। সেই ঘটনার পর থেকে সোহাগপুর গ্রাম এখন ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত।
উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নির্যাতন, ধর্মান্তকরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
অপরাধের সাত ধরনের ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়। গত বছর ১৫ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খানসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে কামারুজ্জামানের পক্ষে ৫ জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। চলতি বছরের ২৪ মার্চ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়ে ১৬ এপ্রিল শেষ হয়।
যত অভিযোগ
গত বছর ৪ জুন জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাত ধরনের অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২, এর মধ্যে রয়েছেথ হান্নানকে নির্যাতন, বদিউজ্জামানকে হত্যা, গোলাম মোস্তফাকে হত্যা, সোহাগপুরে গণহত্যা, লিয়াকতসহ ৮ জনকে হত্যা, টেপা মিয়াসহ ৫ জন হত্যা ও ুিারসহ কয়েক জনকে নির্যাতন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল দুপুরের পর থেকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অসংখ্য পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে পারবে না। সে ব্যাপারে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী রাখা হয়েছে। যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে সতর্ক রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।