দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বলেছে, রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণায় উৎসাহ দিয়েছিলেন সু চি। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাখাইনের এবারের সংকটের সূচনাকালেই পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত এবং কাঠামোবদ্ধ কায়দায় রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা-প্রচারণা চালানো হয়।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় যে, রাখাইনের এবারের সংকটের সূচনাকালেই পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত এবং কাঠামোবদ্ধ কায়দায় রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা-প্রচারণা চালানো হয়। সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশন বলেছে যে, সেনা অভিযান শুরুর পূর্বে সেই প্রচারণাকে সু চির কার্যালয় হতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। বুধবার ৯০০ রেডিওর সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন অমুনাফাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনপিআর’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কমিশনের প্রধান রাদ আল হোসেন এসব তথ্য তুলে ধরেন।
রাদ হোসেন এনপিআর’কে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির সঙ্গে তার শেষ দেখা হয় জানুয়ারি মাসে। সে সময় সু চি তাকে জানিয়েছিলেন যে, সামরিক অভিযান ঠেকাতে সাধ্যমতো তিনি চেষ্টা করেছেন। তাতে কোনও ফলই হয়নি। রাদ আল হোসেন সু চির সেই বক্তব্যকে মোটেও সত্য মনে করেন না। এনপিআরকে তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না, যা করার ছিলো, তার সবকিছুই সু চি করেছেন।’
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার নীরবতার প্রশ্নে তিনি বলেছেন যে, ‘সু চি তার জনগণের কাছে যেনো এক আস্থার প্রতীক ছিলেন। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে আরও সরব হওয়ার কথা ছিলো সুচির। তিনি পারতেন আরও অনেক কিছু করতে।’
ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে রাদ হোসেন বলেছেন, ‘ আমাকে যখন বলা হলো তার কোনও ক্ষমতাই নেই, আমি তখন খুবই অবাক হয়েছিলাম। আমার মাথায় প্রশ্ন এসেছিল, এমন ভয়াবহ একটা ইস্যুতেও যদি সু চি ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম না হন, তাহলে এই রাষ্ট্রীয় অবস্থানে থেকে তার লাভ কী?’
রোহিঙ্গা সংকটের সাম্প্রতিক বাস্তবতা নিয়ে বলতে গিয়ে রাদ আল হোসেন বরং সু চিকে প্রত্যক্ষভাবে দায়ীই করেন। তিনি বলেছেন, ‘বলতে চাইছি, রোহিঙ্গা সংকটের শুরুর দিকে এক ধরনের উসকানি সৃষ্টির বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম, সু চির কার্যালয় হতে উৎসাহিত করা হয়েছিল।’
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত সেনাবাহিনীর শুদ্ধি অভিযান নিয়ে মিথ্যাচারের আলামত হাজির করেছে জাতিসংঘ। রাখাইন হতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৬৫ জন মানুষের সঙ্গে জাতিসংঘ-কর্মীদের আলোচনার ভিত্তিতেই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার ২৫ আগস্টে নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলাকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণ বললেও ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, এর আগে থেকেই সেখানে জাতিগত নিধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, রাখাইন হতে সব রোহিঙ্গাকে তাড়িয়ে দিতে এবং তারা যেনো আর কখনওই রাখাইনে ফিরতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত এবং কাঠামোবদ্ধ কায়দায় সেনা-প্রচারণা ও অভিযান চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।