দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একাত্তরে বাঙালিদের উপর চালানো নির্যাতনের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। তিনি বলেছেন, আমরা হিংস্র আচরণ করে বাঙালিদের আলাদা করে দিয়েছি।
ক্ষমতায় থাকতে স্বীকার না করলেও ক্ষমতার বাইরে এসে একাত্তরে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মমতার কথা স্বীকার করে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেছেন যে, হিংস্র আচরণ করে বাঙালিদের আমরা নিজেদের হতে আলাদা করে দিয়েছি। গতকাল (মঙ্গলবার) ইসলামাবাদের পাঞ্জাব হাউজে নিজ দলের প্রতিনিধি সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় নওয়াজ শরীফ এসব কথা বলেন। এই খবর দিয়েছে ডন উর্দু।
নওয়াজ শরীফ বলেছেন, ‘পাকিস্তান তৈরিতে সবচেয়ে বেশি চেষ্টা-কষ্ট করেছে বাঙালিরা। তবে আমরা তাদের সঙ্গে হিংস্র আচরণ করেছি ও নিজেদের থেকে আলাদা করে দিয়েছি। যে কারণে পাকিস্তান দুই টুকরো হয়ে গেছে।’
সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের এসব বিষয়গুলো অধ্যয়ন করার প্রয়োজন রয়েছে। ১৯৭১ সালে আমরা এমন কী কী করেছি যার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আবেগ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। অথচ এরা তো সেই জনগণ ছিল, যারা কায়েদে আজমের (মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ) সঙ্গে পাকিস্তানকে বানাতে নিয়ামকের ভূমিকা রেখেছিল।’
নওয়াজ আরও বলেন, ‘ঢাকা ভাগ হয়ে যাওয়ার বিষয় নিয়ে বিচারপতি হামুদুর রহমান যে কমিশন গঠন করেছিলেন, তারা সব খুঁটিনাটি কারণ উদ্ঘাটন করেছিলেন ও সত্য প্রকাশ করেছিলেন। তবে আমাদের কেও ওই কমিশনের রিপোর্ট আমলেই নেয়নি। আমরা যদি সেই অনুযায়ী কাজ করতাম, তাহলে আজকের পাকিস্তান সত্যিই ভিন্ন রকম হতো।’
ফেডারেল ব্যবস্থা ও সংবিধানে মুসলিমদের সুরক্ষা প্রদানে হিন্দুদের বিরোধিতার কারণে ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান ভাগ হয়ে যায়। ভূখণ্ড ভাগে ন্যায্যতার দাবিতে চলা আন্দোলনে জিন্নাহর নেতৃত্বে অগ্রভাগে ছিলেন বাঙালি নেতারা। তবে শেষ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিকতন্ত্রের শোষণের মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার পর বাংলাদেশ নামে নতুন দেশের অভ্যুদয় ঘটে।
পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা এবং গণধর্ষণের মতো নিষ্ঠুরতার কারণে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল। এতে শহীদ হয়েছিলেন অন্তত ৩০ লাখ বাঙালি এবং সম্ভ্রম হারিয়েছেন লাখ লাখ বাঙালি নারী।
এমনকি স্বাধীনতার মাত্র দু’দিন আগেও (১৪ ডিসেম্বর) বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। পাক হানাদার বাহিনীকে এই কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে তাদের এই দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর এবং আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরাই এসব বাহিনী গঠন করেছিল।