দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনার সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিন যৌথভাবে তৈরি করতে চলেছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বায়োটেক কোম্পানী। এ বছরই বাজারে আসবে জার্মান-মার্কিন করোনা ভ্যাকসিন।
জার্মানিতে তা মানবদেহে ইতিমধ্যেই প্রয়োগ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে পুশ করা হবে আগামী সপ্তাহে। জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক জানিয়েছে যে, এই বছরের শেষে ভ্যাকসিনটি বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জার্মান ফার্মাসিটিউক্যাল কোম্পানি বায়োএনটেক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপর কোম্পানী ফাইজার সম্ভাব্য ওই ভ্যাকসিন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই যৌথভাবে গবেষণা চালাচ্ছে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনার সম্ভাব্য যে ৮টি ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে তার মধ্যে এটিই হলো অন্যতম।
জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উগুর সাহিন মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএএনকে বলেছেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের শেষ দিকেই ভ্যাকসিনটির কয়েক লাখ ডোজ তারা উৎপাদন করতে পারবেন।
ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোনো মহামারি থেকে রক্ষায় ১৮ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়ার চল বিশ্বে থাকলেও বৈশ্বিক এই মহামারির কারণে ঐতিহাসিক দ্রুততার সঙ্গে এটি আরও অনেক কম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বায়োএনটেক সিইও উগুর সাহিন।
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো মহামারি পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের (অর্থাৎ প্রতিষেধক টিকা) উপকারিতা অপরিসীম। তাই বর্তমান এই মহামারি পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের অনুমোদন অতীতে চলে আসা পদ্ধতির চেয়ে আরও ভিন্নভাবে করা হতে পারে। আমাদের ভিন্নপথেই হাঁটতে হবে।’
বায়োএনটেক সিইও তাদের তৈরি এই ভ্যাকসিনের সম্ভাবনা নিয়ে আরও বলেন, ‘এই ভ্যাকসিন যে কাজ করছে আমরা সেটি দেখতে পাচ্ছি। এমনকি কম মাত্রায় প্রয়োগ করেও এই ভ্যাকসিনটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিভিন্ন প্রাণীর দেহে আমরা এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করেছি। এটি বেশ কার্যকরীও হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, মানুষের ক্ষেত্রেও এই ভ্যাকসিন একইভাবে কাজ করবে।’
বায়োএনটেক বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৩ এপ্রিল হতে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত জার্মানিতে ১২ জন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে বিএনটি১৬২ নামের এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে আরও ২০০ স্বেচ্ছাসেবীর দেহে এটি প্রয়োগ করবে; যাদের বয়স হবে ১৮ হতে ৫৫ বছরের মধ্যে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে প্রয়োগের জন্য দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পর সম্ভাব্য ওই ভ্যাকসিনের মার্কিন অংশীদারি কোম্পানি ফাইজার জানিয়েছে যে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগও করবে। আগামী শরৎ এর মধ্যে যেটি জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে।
মহামারি নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে ১০৮টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন (প্রতিষেধক) তৈরির কাজ চলছে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে যে, বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য এই ১০৮টি ভ্যাকসিনের মধ্যে ৮টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্থাৎ মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদনও পেয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।