দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাকশিল্পে লাগাতার শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত রয়েছে। আজ সব গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গার্মেন্টস মালিকরা।
পোশাককর্মীরা বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে গতকাল বুধবারও বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ১০ পোশাককলকর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ আহত হন দেড় শতাধিক। নাশকতার আশঙ্কায় নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় সাড়ে ৩ শতাধিক পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পোশাক কারখানাকর্মীরা অভিযোগ করেন, পুলিশ আন্দোলনরত পোশাককলকর্মীদের শ্রমমূল্য পরিশোধ করছে গুলিবর্ষণ ও লাঠিপেটা করে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, গুলি ও লাঠিপেটা করে কখনও শ্রমিক অসন্তোষ দমানো যাবে না।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লা উপজেলার শিবু মার্কেট এলাকায় গতকাল বুধবার পোশাককলকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। পোশাককলকর্মীরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি যানবাহন এবং ২০-২৫টি পোশাক কারখানা ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫০ রাউন্ড শর্টগান এবং এক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা হাসপাতালের রেজিস্টারের তথ্যানুযায়ী ১৫ জন পোশাক কর্মী চিকিৎসা নিয়েছেন।
গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী এলাকায় পোশাককলকর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। একই সময়ে কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের চন্দ্রায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। সকাল পৌনে ৯টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও বড়বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ পোশাকলকর্মীদের ধাওয়া দেয়। সকাল সাড়ে ৮টায় পানিশাল এলাকার সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ অর্ধশতাধিক টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ২ পুলিশ কনস্টেবলসহ ও ৫০ জনের মতো শ্রমিক আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সাভারের আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার বাংলাবাজারে গতকাল সকাল ৯টায় বিক্ষোভ শুরু হয়। আশুলিয়া-কোনাবাড়ি এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করার সময় পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয় ২০ জন। জিরানী এলাকায় নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে পোশাককলকর্মীরা। তারা গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে শিল্প পুলিশ জলকামান ও সজোয়া যান নিয়ে এসে জিরানী এলাকায় ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এ সময় দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা জিরানী এলাকা। এতে এক পুলিশসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে পুলিশ কমপক্ষে ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সব কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে পোশাক কারখানা মালিকরা। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এক বৈঠকের পর মালিকরা এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। মালিকরা বলেছেন, সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে আমরা কারখানা চালু রাখতে প্রস্তুত।
সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাবসহ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।