দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতকালীন সবজির তালিকায় পাতা কপি বা বাঁধাকপি অন্যতম জনপ্রিয় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। দাম কম, সহজলভ্য এবং রান্নায় বহুমুখী ব্যবহার- এইসব কারণে এটি মানুষের খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

নানা গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পাতা কপি খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। পুষ্টিবিদরা বলেন, শীতে নিয়মিত এই সবজি খেলে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
# পাতা কপিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সর্দি–কাশির মতো মৌসুমি সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং কোলাজেন তৈরি করে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
# পাতা কপি ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। নিয়মিত ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে অন্ত্র পরিষ্কার থাকে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এটি বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
# পাতা কপিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড, পলিফেনল ও সালফার যৌগ। এসব উপাদান শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে, ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে। বিশেষ করে কলন ক্যানসার প্রতিরোধে পাতা কপি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় বলা হয়।
# যাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য পাতা কপি অত্যন্ত উপকারী। এতে ক্যালরি কম থাকায় এটি ওজন কমাতে সহায়ক একটি খাবার। সালাদ, স্যুপ বা ভাজিতে সহজেই যোগ করা যায় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাবারের প্রবণতা কমে।
এর পাশাপাশি পাতা কপি হার্টের জন্যও খুবই ভালো। এতে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে। ফাইবার হৃদপিণ্ডে চর্বি জমতে বাধা দেয় এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পাতা কপির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, পাতা কপিতে রয়েছে বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় এবং দাঁতকে মজবুত রাখে।
পাতা কপি শুধু সুস্বাদু নয়, বরং স্বাস্থ্যকর একটি পূর্ণাঙ্গ সবজি। শীতের এই সহজলভ্য সবজি নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজমশক্তি উন্নত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে যায়। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পাতা কপি রাখতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org