দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ২০১৪ সাল হতে এই পর্যন্ত মাত্র ১৩ হাজার মুসলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চীন। ১৩ হাজার মুসলিমকে গ্রেফতারের বিষয়ে ‘মাত্র’ শব্দটি ব্যবহার করায় বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গত সোমবার দেশটির সরকারি শ্বেতপত্রে এই তথ্য জানানো হয়। মূলত জিনজিয়াং (শিনহিয়াং) প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেই এসব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চীন সরকার।
অপরদিকে জাতিসংঘের হিসাব মতে, চীনের কারাগারগুলোতে উইঘুর এবং অন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে আটক করে রাখা হয়েছে।
চীনের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের অভিযোগ করে আসছে পাশ্চাত্য ও মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ। যদিও চীন বলছে যে, সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য এসব কারাগার ‘বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবেই পরিচালিত হয়ে থাকে।
শ্বেতপত্রে চীনা কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, ২০১৪ সাল হতে জিনজিয়াংয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে ১ হাজার ৫৮৮টি অভিযান চালিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১২ হাজার ৯৯৫ জনকে। তাছাড়া জব্দ করা হয় ২ হাজার ৫২টি বিস্ফোরক দ্রব্য। ৪ হাজার ৮৫৮টি নিষিদ্ধ ধর্মীয় কার্যকলাপের জন্য ৩০ হাজার ৬৪৫ জনকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ২২৯টি নিষিদ্ধ ধর্মীয় বস্তু জব্দ করেছে চীন।
শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, শুধু অল্প সংখ্যক মানুষ কঠোর শাস্তি ভোগ করে যারা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য বা যারা চরমপন্থী শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে।
এই শ্বেতপত্রটি প্রকাশের পর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস। সংগঠনটির একজন মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ‘চীন ইচ্ছাকৃতভাবেই সত্য বিকৃত করছে। সন্ত্রাস দমন হচ্ছে উইঘুরদের নির্যাতনের একটি অযুহাত মাত্র। তথাকথিত চরমপন্থা দমনের নামে সরকারের মূল উদ্দেশ্যই হলো এই জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসকে মুছে ফেলা ও তাদেরকে ধীরে ধীরে নির্মূল করে ফেলা।’
শ্বেতপত্রে আরও বলা হয় যে, ‘২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর হতে জিনজিয়াংয়ে তারা কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আসছেন। পূর্ব তুর্কিস্তানের যোদ্ধারা জিনজিয়াং এলাকাতে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে। তারা জিহাদের মাধ্যমে শহীদ হওয়া এবং স্বর্গে যাওয়ার নামে এই চিন্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।’ এতে আরও বলা হয়, ‘ইসলামের নামে যে ধর্মীয় সহিংসতা ঘটানো হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তা ইসলাম নয়।’
শ্বেতপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, জিনজিয়াং চীনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। উইঘুর নৃ-গোষ্ঠী দীর্ঘ অভিভাসন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলে এসেছে ও বসবাস করে আসছে। তারা তুর্কি বংশধর নয়।
উল্লেখ্য, উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে তর্কি সংস্কৃতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনও তুর্কি ভাষায় কথা বলে। তাই তুরস্কই একমাত্র দেশ যারা জিনজিয়াং এর পরিস্থিতি নিয়ে সবসময় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তবে চীন সবসময়ই তুরস্কের এই ধরনের তৎপরতাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো হিসেবে বর্ণনা করে তা প্রত্যাখান করে আসছে।