দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেক দীঘির কথা হয়তো আপনি শুনেছেন। কিন্তু আজ যে দীঘির কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো সেটি এক অনন্য দীঘি। আপনি চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গাইলের সাগরদীঘি হতে।
ঐতিহাসিক এই সাগরদীঘি অবস্থিত টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার পূর্বে। প্রায় ১৩ একর জায়গা জুড়ে পাল আমলের সাগর রাজার নেতৃত্বে এই বিশাল দীঘিটি খনন করা হয়। সাগরদীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এলাকার পূর্ব নাম “লোহিনি” হলেও বর্তমানে এটি সাগরদীঘি নামেই অধিক পরিচিতি লাভ করেছে।
লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে সাগর রাজা প্রজাদের পানির কষ্ট দূর করার উদ্দেশ্যেই এই জলাশয়টি খনন করেছিলেন। খননের পর জলাশয়ে কোনো পানিই উঠেনি, রাজা এক স্বপ্নাদেশে রানীকে দীঘিতে নামানোর নির্দেশনা পেলেন। পরবর্তীতে রানীকে দীঘিতে নামানোর পর পরই দীঘি পানি ভরে উঠলে আর তখন রানীর জীবন বিপন্ন হলো। আবার অনেকের ধারণা মতে, সাগর নামের ধর্মপরায়ণ এক কুমোরের আত্নত্যাগের মাধ্যমেই এই দীঘিতে পানি উঠেছিল, যার ফলস্বরূপ দীঘির নামকরণ করা হয় সাগর কুমোরের দীঘি বা সাগরদীঘি।
এই সাগরদীঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে শান বাঁধানো ঘাটের ধ্বংসাবশেষ, যা মূলত রাজার বাসস্থান ছিল বলে ধারনা করা হয়ে থাকে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে সাগর দীঘি উচ্চ বিদ্যালয় ও সাগরদীঘি দাখিল মাদ্রাসা। এছাড়াও দীঘির দক্ষিণ পাশে সাগর রাজার পুত্র বনরাজ পাল প্রায় ২৫ একর জায়গার উপর আরেকটি দীঘিও খনন করেন, যা “বইন্যা দীঘি” নামেও পরিচিত।
যাবেন কিভাবে
ঢাকা থেকে সাগরদীঘি যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় আসতে হবে। ঘাটাইলহতে সাগরদীঘি যেতে প্রায় সোয়া ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। ঢাকা থেকে বাস কিংবা নিজস্ব পরিবহনে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল যেতে পারবেন। ঢাকার মহাখালি কিংবা কল্যাণপুর হতে নিরালা, বিনিময়, ঝটিকা, সোনিয়া, সকাল সন্ধ্যা, দ্রুতগামী ও ধলেশ্বরীর মতো এসি/নন-এসি বাস বা ধনবাড়িগামী বাসে চড়ে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট নামতে হবে। ক্যান্টনমেন্ট হতে অটো কিংবা সিএনজি নিয়ে খুব সহজেই সাগরদীঘি যেতে পারবেন। এখানে যেতে বাস ভেদে ভাড়া পড়বে ১৬০ থেকে ২০০ টাকার মতো।
থাকবেন কোথায়
ঢাকা হতে ঘাটাইলের সাগরদীঘি ঘুরে এক দিনেই আবারও ঢাকায় ফিরে আসতে পারবেন। প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতে চাইলে ঘাটাইল শহরে শাপলা আবাসিক হোটেল, মিতালি গেস্ট হাউজ এবং বনসাই আবাসিক হোটেলের মতো কিছু মধ্যম মানের আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। এছাড়াও টাঙ্গাইল শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল, রেস্ট হাউজ ও রিসোর্টও রয়েছে।
খাবেন কোথায়
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের অবস্থিত হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মধ্যে রয়েছে ধানসিঁড়ি হোটেল, প্রাপ্তি রেস্তোরাঁ, হোটেল ৫ স্টার, শান্তর হোটেল এবং রবির হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ঘাটাইল শহর হতে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে পোড়াবাড়ির বিখ্যাত চমচম খেতেও ভুলবেন না।
টাঙ্গাইলের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
টাঙ্গাইলের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে করটিয়া জমিদার বাড়ি, মহেরা জমিদার বাড়ি, পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, বিখ্যাত আতিয়া মসজিদ, ২০১ গম্বুজ মসজিদ, যমুনা রিসোর্ট এবং মধুপুর জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি স্থান সমূহে ইচ্ছে করলে আপনি বেড়াতে পারবেন।
তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com