দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবার আর লাঠির ঠুক ঠুক করে নয়, লাঠি ছাড়াই চোখে চশমা দিয়ে চলাফেরা করতে পারবে দৃষ্টির আলো থেকে বঞ্চিতরা। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দুই কৃতি ছাত্র নাজমুল ও মোস্তফা দুজন মিলে তৈরি করেছেন অন্ধদের পথ চলার জন্য বিশেষ এক চশমা। চশমাটি নিয়ে নাজমুল ও মোস্তফা দুজনই দিয়েছেন বিস্তারিত বর্ণনা।
চশমাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তারা জানান, প্রাপ্ত শব্দের উপর ভিত্তি করে চশমাটি বানানো হয়েছে। অন্ধ ব্যক্তির কাজ হবে পথ চলার আগে শুধু একটি বোতাম টিপে চশমাটি চালু করে দেয়া। চশমাটি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যে সামনে কোনো বাধা পেলে ‘ফ্রন্ট’, ডানের জন্য ‘রাইট’, বামের জন্য ‘লেফট’ উচ্চারণ করে বস্তুর সঠিক অবস্থান ব্যবহারকারীদের জানিয়ে দেবে। বস্তুর দূরত্ব ভেদে উচ্চারণের তীব্রতাও হবে ভিন্ন। যা থেকে ব্যবহারকারী বস্তুর দূরত্ব সম্পর্কে একটি পূর্ণ ধারণা পাবেন। দিনে-রাত ছাড়াও ঘন কুয়াশার মধ্যেও যন্ত্রটি ব্যবহার করা সম্ভব বলে জানান দুই শিক্ষার্থী। যন্ত্রটির নির্ভুলতা সম্পর্কে জানতে চাইলেন তারা জানান এটি দিয়ে প্রায় তিন মিটার দূরত্ব পর্যন্ত কোনো বস্তুর অবস্থান ৯৮% নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যাবে। অন্ধ ব্যক্তিরা এই চশমাটির সাহায্যে পানিতে সাঁতারও কাটতে পারবেন বলে জানালেন তারা।
অন্ধ ব্যক্তিদের পথ দেখানো ছাড়াও এই চশমাটি দিয়ে নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করে কক্ষে অবাঞ্চিত ব্যক্তির প্রবেশ শনাক্ত করত পারা, গাড়ি চুরি রোধ, এবং দূরত্ব মাপা সম্ভব হবে এটি দিয়ে। ভবিষ্যতে যন্ত্রটিতে থাকবে জিপিএস টেকনোলজি এবং একে স্মার্টফোনের সাথে সংযুক্ত করা হবে, যাতে অন্ধ ব্যক্তিরা সহজে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। সেই সঙ্গে থাকবে অন্ধ ব্যক্তিদের ওপর সার্বক্ষণিক অনলাইন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে সব নির্দেশনা দেওয়া হবে বাংলা ভাষায়।
এদিকে যন্ত্রটির ব্যয়মূল্য জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র সাতশ’ টাকা। এতে দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘আল্ট্রাসনিক সেন্সর’, ডাটা প্রসেসিং এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘পিআইসি’ সিরিজের মাইক্রোকন্ট্রোলার এবং আউটপুট ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ এয়ারফোন। এতে ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইল ব্যাটারি যা একবার চার্জ করলে ব্যবহার করা যাবে টানা ত্রিশ ঘণ্টা। এমনকি চার্জ শেষ হয়ে গেলেও বিশেষ ক্যাবল ইন্টারফেসের মাধ্যমে এটিকে মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করে সচল রাখা যাবে বাড়তি কয়েক ঘণ্টা।
নাজমুল হাসান তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগে এবং মোস্তফা কামাল কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছেন। দু’জনই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র ও অনুন্নত দেশে যন্ত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন তারা। এ ব্যাপারে সরকার ও গবেষণাবান্ধব প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেছেন। তারা বলেন, “বাজারজাত করতে পারলে খরচ আরও কমিয়ে আনা সম্ভব।”
তথ্যসূত্রঃ ফেসবুক