দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, বাদাম খেলে নাকি ওজনের কাঁটা উর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এই কথার কী কোনওই যুক্তি রয়েছে? এই বিষয়টি নিয়ে অকপট আলোচনা করেছেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ। কী বললেন তিনি?
আমরা অনেকেই বাদাম পছন্দ করি। বাদামের সঙ্গে আমাদের গভীর বন্ধুত্বও রয়েছে। লোকাল ট্রেন থেকে শুরু করে খেলার মাঠ, বা পার্কে বসে প্রেম করার সময় অধিকাংশ বাঙালিই বাদাম খেতে থাকেন। এমনকী অনেকেই তো প্রতিদিনই বাদাম দিয়ে মুড়ি মেখেও খান। এর পাশাপাশি আজকাল একদল স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ শরীরের হাল ফেরাতেও বাদাম খান।
তবে সাধারণ বাঙালির এহেন বাদাম প্রীতিকে একবারেই ভালো চোখে দেখেন না কিছু সোশ্যাল মিডিয়ার বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, নিয়মিত বাদাম খেলে কোনও উপকার পাওয়া যায় না, উল্টো শরীরের ওজন এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়তেও পারে। এই কথা শুনেই বাদাম প্রেমীরা ঘাবড়ে গিয়েছেন। তাদের মাথায় প্রশ্ন আসে, সত্যিই কী বাদাম খেলে ওজন বাড়ে? এবার সেই প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতেই আমরা যোগাযোগ করেছি কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরির সঙ্গে। এই বিষয়ে কী জানালেন তিনি?
পুষ্টিগুণে সেরার সেরা
আমাদের পরিচিত সব বাদামই হলো পুষ্টির খনি। এগুলিতে রয়েছে কিছুটা প্রোটিন এবং ফ্যাট। সেইসঙ্গে বাদামে রয়েছে আয়রণ, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামের মতো খনিজও। যে কারণে এই খাবার খেলে দেহে পুষ্টির ঘাটতিও মিটে যায়। শুধু তা-ই নয়, বাদামে রয়েছে উপকারী ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও। এই উপাদান হার্ট ও ব্রেনের উপকারও করে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিতভাবে বাদাম খেতে পারেন।
বাদাম খেলে কী ওজন বাড়ে?
এ সম্পর্কে কোয়েল বলেন, ‘বাদাম অত্যন্ত উপকারী এক খাবার। এই খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের বহু উপকার হবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, বাদামে অবশ্য বেশ কিছুটা ফ্যাট রয়েছে। বিশেষত:, চীনা বাদাম এও কাজু বাদামে ফ্যাটের পরিমাণ একটু বেশি। তাই এই ধরনের বাদাম অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বাড়তেও পারে। তবে কেও যদি নিয়ম মেনে এইসব নাটস খান, তাতে করে শরীরের হাল ফিরবে। তাই ওজন বাড়ার ভয়ে বাদাম থেকে দূরত্ব তৈরি করার কোনও অর্থই নেই।’
তাহলে কী পরিমাণ খেতে হবে?
যে কোনও বাদামই মুঠো মুঠো খেতে বারণও করলেন এই পুষ্টিবিদ। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন অল্প পরিমাণে বাদাম খেতে পারেন। বড়জোর ৫০ গ্রামের মতো করে খেতে পারেন। চেষ্টা করুন কোনও এক ধরনের বাদাম খাওয়ার বদলে বিভিন্ন নাটস মিশিয়ে খাওয়ার জন্য। এইক্ষেত্রে চীনা বাদাম, কাজুবাদাম, আমন্ড, ওয়ালনাট মিলিয়ে মিশিয়েও খেতে পারেন। তাতে ওজন বাড়ার আশঙ্কাও এতে করে কমবে। সেইসঙ্গে পাবেন হাজার রকম উপকার। আপনার শরীরের হাল ফিরে আসবে।
লবণ মেশানো বাদাম নয়
ট্রেনে বা বাইরে লবণ, মশলা মেশানো বাদামের প্যাকেট কিনতে পাওয়া যায়। এই বাদাম প্রতিদিন অবলীলায় খেয়ে চলেন অনেকেই। যে কারণে তাদের শরীরের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। কারণ হলো, লবণে রয়েছে সোডিয়াম। এই উপাদান দেহে পানি ধরে রাখে। যে কারণে দ্রুত প্রেশারও বাড়ে। এমনকী কিডনির ভয়াবহ ক্ষতিও হয়। তাই চেষ্টা করুন, যেভাবেই হোক লবণ সমৃদ্ধ বাদাম এড়িয়ে চলার জন্র। সেইসঙ্গে তেলে ভাজা বাদামও খাওয়া যাবে না। চেষ্টা করুন বালিতে ভাজা বাদাম খাওয়া। তাতে বেশ উপকার পাবেন।
গ্যাস-অ্যাসিডিটিতে সাবধান
অত্যাধিক পরিমাণে বাদাম খাওয়া যাবে না। কারণ এটি অতিরিক্ত খেলে গ্যাস-অ্যাসিডিটিও হতে পারে। বিশেষত:, যাদের আইবিএস, আইবিডি কিংবা অন্যান্য গ্যাসট্রাইটিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। নইলে পেটের হাল বিগড়ে যেতেও সময় লাগবে না। তাই আপনারা বুঝে-শুনে বাদাম খান। খুব সমস্যা হলে এই খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন। প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সচেতনতার উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org