দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সদ্যোজাত বা শিশুদের ঘুম নিয়ে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ নেই। বিশেষ করে রাতের বেলায় শিশু যদি ঠিকমতো না ঘুমোয়, তাহলে শিশু তো বটেই, বাবা-মায়েরও অসুবিধে হতে পারে।

শিশুদের ঘুমের চাহিদা থাকে বড়দের থেকে বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ১২ হতে ১৮ ঘণ্টা ঘুম খুবই স্বাভাবিক। অবশ্য বয়সভেদে এই ঘুমের চাহিদা ভিন্নও হয়ে থাকে। সাধারণত শিশুরা একটানা খুব কম ঘুমোয়। একটু একটু করে সারাদিন ধরে ঘুমোতে পছন্দ করে তারা। দিনের বেলায় বেশি ঘুমোলে স্বাভাবিকভাবেই রাতে কম ঘুমোয়। তবে রাতে ঘুমোনো কিংবা না ঘুমানো, শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য যেমন খারাপ একটি বিষয়, তেমনি বাবা মায়ের দৈনন্দিন জীবনের রুটিনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধান করতে আপনাকে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তবে তারও আগে জানতে হবে, শিশুদের ঘুমের সমস্যা কি কারণে হয়।
শিশুর ঘুমের সমস্যার প্রধান কারণ
শিশুদের রাতে ঘুম না হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। যেমন- খিদের কারণে ঘুম না আসা, শারীরিক কোনও অস্বস্তি বোধ করার কারণে এবং মায়ের সান্নিধ্য কিংবা স্পর্শ না পাওয়া। শিশুর রাতের জন্য যদি রাতে না ঘুমোয় তাহলে কয়েকটি পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
ফার্বার পদ্ধতি
এই ফার্বার পদ্ধতি হলো শিশুকে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ঘুম পাড়ানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু নিজে নিজে ঘুমিয়ে পড়তেও অভ্যস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শিশু চিকিৎসক ও ঘুম বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ফার্বারের নাম অনুসারে এই পদ্ধতির নামকরণ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে শিশুরা নিজের কাজ (খেলাধুলো, হাসাহাসি, মজা, দুষ্টুমি, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি) সেরে নিজেই তখন ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতিদিন একই রুটিন মানতে মানতে তারা যেনো অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার কিছু অভ্যাস, যেমন- ঘুমোনোর জন্য শিশুকে দোল দেওয়া, গান শোনানো কিংবা স্তন্যপান করানো ইত্যাদিতে শিশুর মস্তিষ্ক অভ্যস্ত হয়ে পড়লে সে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ে। শিশুকে এই অভ্যাসগুলো করাতে পারেন। ধারাবাহিকভাবে ৩ থেকে ৭ দিন এভাবে একই কাজ করলে সে ধীরে ধীরে রাতের বেলায় নিয়ম করে ঘুমিয়ে পড়বে। তবে কোনও কোনও শিশু ১৫ দিনের মধ্যেও এই পদ্ধতিতে সাড়া দেয় না। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।
নির্দিষ্ট সময় পর জাগিয়ে তুলতে হবে
এই পদ্ধতিটিতে প্রথমেই এক সপ্তাহের জন্য আপনার শিশুর ঘুমের প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শিশু যখন ঘুম হতে জেগে ওঠে, সেই সময় প্রায় ১৫ মিনিট আগে তাকে জাগিয়ে তুলুন। ধীরে ধীরে এই সময়টাও বাড়ান, যেনো শিশুর ঘুমের সময়কাল দীর্ঘ হয় ও রাত জাগাও কমে যায়। এই পদ্ধতিতে শিশু কান্নাকাটি কম করে ও বাচ্চার ঘুমানো এবং জেগে ওঠার প্যাটার্নের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। এই অভ্যাস তৈরি হতে প্রায় তিন থেকে চার সপ্তাহ সময়ও লাগতে পারে। সুতরাং, অধৈর্য হয়ে পড়বেন না কখনও।
শিশুকে নিজের সঙ্গে নিয়ে ঘুমোনো
শিশুকে বেবি কট বা দোলনায় ঘুম পাড়ানোর বদলে, নিজের সঙ্গে বিছানায় ঘুম পাড়ান। কারণ হলো মায়ের স্পর্শ পেলে শিশু নিরাপদবোধ করে ও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে। এছাড়াও মায়ের দুধ খেতে খেতেও শিশু দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org