দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময় দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং মানসিক চাপের কারণে বিভিন্ন রোগ-বালাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সুস্থ থাকতে হলে শুধু চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে নিজের জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। কিছু সহজ অভ্যাসই পারে আপনাকে রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। নিয়মিত হাত ধোয়া, খাবার ঢেকে রাখা, বিশুদ্ধ পানি পান করা এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখা অনেক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে খাবার খাওয়ার আগে এবং বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি।
সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, মাছ এবং দুধ প্রতিদিন খেতে হবে। অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া উচিত, কারণ এসব খাবার শরীরের প্রতিরোধশক্তি দুর্বল করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা অভ্যাসে পরিণত করুন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো বা হালকা ব্যায়াম শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্ত রাখে।
পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য। ঘুম কম হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নানা রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, প্রার্থনা বা প্রিয় কাজের মধ্যে সময় দিন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। অনেক সময় রোগ প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা যায় না, তাই বছরে অন্তত একবার রুটিন চেকআপ করালে রোগ দ্রুত শনাক্ত এবং প্রতিরোধ করা যায়।
ধূমপান এবং মাদক থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইসব অভ্যাস শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে নষ্ট করে এবং গুরুতর অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়।
রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করা একদিনের কাজ নয়- এটি একটি জীবনধারা। পরিচ্ছন্নতা, সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি- এই ৫টি নিয়ম মানলেই সুস্থ ও রোগমুক্ত জীবন সম্ভব।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org