দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় এ পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। আজ (২ ডিসেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির উদ্ধারকর্মীরা এখনও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে লড়াই করে যাচ্ছেন।

মালাক্কা প্রণালীতে সৃষ্ট বিরল এক ঘূর্ণিঝড় গত সপ্তাহে দেশটির ৩টি প্রদেশে আঘাত হানে, যা প্রায় ১৪ লাখ মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারের দুর্যোগ বিষয়ক সংস্থা। আরও অন্তত ৫০০ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এতে এ ছাড়াও আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
এশিয়ার যেসব জায়গায় এবার প্রবল বর্ষণ এবং ঝড় আঘাত করেছে ইন্দোনেশিয়া তার অন্যতম। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলঙ্কাতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশ, উত্তর সুমাত্রা এবং পশ্চিম সুমাত্রাতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এখনও এইসব এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও জরুরি সরবরাহ থেকেও বঞ্চিত রয়েছে।
আচেহ প্রদেশের একজন অধিবাসী আমালিয়া একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন যে, বন্যার পানি অনেকটা সুনামির মতোই মনে হয়েছে। আমার দাদির মতে এটি তার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়াবহতম দুর্যোগ।
রাস্তাঘাট কাঁদা এবং আবর্জনায় বন্ধ হয়ে থাকায় ত্রাণকর্মীরা পায়ে হেঁটে এবং মোটরসাইকেলে করে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
বিবিসি ওয়েদার বলছে, একটি কারণ হলো উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু। এটি সাধারণভাবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ফেলে। এর জের ধরেই উত্তর পূর্ব দিকে বাতাস বয়ে আসে যা সমুদ্র থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয় ও বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই প্রচুর বৃষ্টি হয়।
শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার কারণেই প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। তবে এই ঝড়টি দুর্বল হয়ে গেছে। যে কারণে ভারতের দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।
মালয় উপত্যকায় সুমাত্রা এবং থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার একই রকমের প্রভাব ফেলেছে। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। এটি মূলত একটি বিরল ধরনের ঝড়। ওই এলাকায় এভাবে সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় না।
ভিয়েতনামেও গত কয়েক সপ্তাহে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। টাইফুন কোটোর শেষাংশ ভিয়েতনাম উপকূলের দিকে আসতে থাকা বর্ষণ এবং অতিরিক্ত বন্যার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org