দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সিএনএন এর এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে উঠে এসেছে, ফিলিস্তিনের গাজায় জিকিম ক্রসিংয়ের কাছে ত্রাণ আনতে যাওয়া অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি সেনারা নির্বিচার গুলিতে হত্যা করে এবং তাদের মরদেহ বুলডোজার দিয়ে অচিহ্নিত কবরে মাটিচাপা দিয়েছে।

আইনবিশেষজ্ঞদের মতে, বুলডোজার দিয়ে অচিহ্নিত কবরে মরদেহ চাপা দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনেরও লঙ্ঘন হতে পারে, যা জেনেভা চুক্তির আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে। জুনে ত্রাণ আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আম্মার ওয়াদির মতো অসংখ্য ফিলিস্তিনির ভাগ্যে কী জুটেছে, তা জানতে এই অনুসন্ধান চালিয়েছে সিএনএন। ওয়াদি তার মোবাইলের স্ক্রিনে ‘মা, আমার কিছু হয়ে গেলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। যে আমার ফোনটি পাবেন, তিনি যেনো আমার পরিবারকে বলে দেন, আমি তাদের খুব ভালোবাসি’ -লিখে রেখেছিলেন।
জিকিমের আশপাশের শত শত ছবি এবং ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় ত্রাণবাহী ট্রাকের চালকদের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করেই সিএনএন এই পর্যালোচনা করেছে।
ওই পর্যালোচনায় দেখা যায়, ত্রাণপ্রত্যাশীরা ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতেও ত্রাণপ্রত্যাশীরা যে এলাকায় নিহত হন, সেখানে বুলডোজারের তৎপরতা চোখে পড়েছে।
ইসরায়েলের দু’জন সাবেক সেনাসদস্য সিএনএনকে জানিয়েছে যে, তারা যুদ্ধের সময় গাজার অন্যত্র এমন নানা ঘটনা দেখেছেন, যেখানে ফিলিস্তিনিদের মরদেহ অগভীর কবরের মধ্যে বুলডোজারের মাধ্যমে চাপা দেওয়া হয়। এই সাবেক সেনা সদস্যদের একজন বলেন, ‘আমাদের কমান্ডার ডি-৯, অর্থাৎ বুলডোজারগুলোকে এইসব মরদেহ বালুচাপা দিতে নির্দেশ দেন।’ সাবেক এক আইডিএফ সদস্য সিএনএনকে জানিয়েছেন যে, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে তার ইউনিট ৯ জনকে কবর দিয়েছিল কোনো চিহ্ন না রেখে।
যদিও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) মরদেহ সরাতে বুলডোজার ব্যবহারের এই কথা অস্বীকার করেছে। তবে আইডিএফ সিএনএনকে জানিয়েছে যে, জিকিমের আশপাশে বুলডোজারের উপস্থিতি ‘নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ ছিল,’ যা বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার করা হতো। জিকিম রুটে কাজ করা অন্তত ৬টি ত্রাণবাহী ট্রাকের চালক সিএনএনকে বলেছেন, পচে যাওয়া মরদেহ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকার দৃশ্য সেখানকার স্বাভাবিক ঘটনা ও কখনও কখনও ইসরায়েলি বুলডোজার মরদেহগুলো বালুর মধ্যেও চাপা দেয়।
গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগের কর্মীদের পরিচালিত একটি অ্যাম্বুলেন্সের একজন কর্মী বলেছেন, ‘সেখানকার দৃশ্য দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেছি। আমরা যেসব মরদেহ উদ্ধার করেছি, সেইসবও পচে গেছে। মরদেহের কিছু অংশে কুকুরের খাওয়ার চিহ্নও চোখে পড়ে।’ নিখোঁজ ছেলেকে খুঁজতে যাওয়া আদিল মনসুর বলেছেন, ‘আমি সেখানে অনেক মরদেহ দেখি, যেগুলো (ত্রাণের) বাক্সের সঙ্গে বুলডোজার দিয়ে চাপা দেওয়া হয়েছে। একটির ওপর আরেকটি স্তূপ করে রাখা হয়।’
অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর এথিকস, ল অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট–এর সহপরিচালক জেনিনা ডিল বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুদ্ধে বিবাদমান পক্ষগুলোকে মরদেহ এমনভাবে কবর দেওয়ার জন্যই সহযোগিতা করা উচিত, যাতে সেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তিনি আরও বলেন, মরদেহ বিকৃত বা এর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হলে তা ব্যক্তিগত মর্যাদার লঙ্ঘন হিসেবেও গণ্য হতে পারে। ওয়াদি নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৬ মাস পার হয়ে গেলেও তার পরিবার এখনও কোনো উত্তরই পায়নি।
ওয়াদির ভাই হোসাম বলেছেন, ‘আম্মারের অনুপস্থিতি আমাদের জীবনে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। যদি তিনি শহীদ হয়ে থাকেন, আল্লাহ যেনো তার প্রতি দয়া করেন। আর যদি তিনি বেঁচে থাকেন, তাহলে আমাদের অন্তত হাতে আঁকড়ে ধরার মতো এতটুকু আশাও থাকবে। তথ্যসূত্র: সিএনএন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org