দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ, কার্যকর ও উপযোগী ব্যায়াম হলো হাঁটা।

বিশেষ করে ব্যস্ত জীবনে যখন নিয়মিত জিম বা কঠিন ব্যায়ামের সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় হাঁটলেই শরীর সুস্থ রাখা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো- প্রতিদিন কতটুকু হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো?
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা প্রয়োজন। এটি হৃদ্যন্ত্রকে সক্রিয় রাখে, রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীরের বিপাকক্রিয়া উন্নত করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দ্রুত গতিতে ৩০ মিনিট হাঁটলে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। আবার যারা শুরু করতে চান বা বয়স বেশি, তাদের জন্য ১৫–২০ মিনিট দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো উচিত।
হাঁটার আরেকটি প্রচলিত পরিমাপ হলো দৈনিক পদক্ষেপ সংখ্যা। সাধারণত দিনে ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ পদক্ষেপ হাঁটাকে স্বাস্থ্যকর ধরা হয়। এর কমেও উপকার হয়, তবে ৮,০০০ পদক্ষেপের বেশি হাঁটলে হৃদ্স্বাস্থ্য, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক সুস্থতায় আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। শহুরে জীবনে প্রয়োজনীয় কাজকর্মে অনেকেই ৩,০০০–৪,০০০ পদক্ষেপ হাঁটেন। তাই চাইলে বাকিটা সচেতনভাবে হাঁটা বা ছোট হাঁটা-বিরতি যোগ করেই পূরণ করা সম্ভব।
হাঁটার গতি এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধীরগতির হাঁটা শরীরকে সচল রাখলেও স্বাস্থ্যগুণ বাড়াতে চাইলে মাঝারি থেকে দ্রুতগতি (যেখানে হাঁটার সময় সামান্য শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায়) সবচেয়ে উপকারী। দ্রুত হাঁটা ক্যালোরি পোড়ায়, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং হার্ট ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে।
নিয়মিত হাঁটার আরও অনেক উপকারিতা আছে। এটি মানসিক চাপ কমায়, ঘুমের মান বাড়ায় এবং মুড ভালো রাখে। হাঁটার সময় শরীরে “এন্ডোরফিন” নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা স্বাভাবিকভাবে দুঃশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা দূর করে। এছাড়া হাঁটা জয়েন্ট ও হাড়ের জন্যও ভালো। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয় কমাতে এবং হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
মনে রাখতে হবে- হাঁটা যেন নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়। প্রতিদিন একই সময়ে হাঁটা, আরামদায়ক জুতো ব্যবহার, সোজা ভঙ্গিতে হাঁটা ও প্রয়োজন হলে পানি সঙ্গে রাখা জরুরি। শুরুতে অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটার সময় ও গতি বাড়ালে শরীর সহজে মানিয়ে নেয়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বা ৮,০০০–১০,০০০ পদক্ষেপ হাঁটা সাধারণ স্বাস্থ্য বজায় রাখতে যথেষ্ট উপকারী। নিয়মিত হাঁটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, বরং এটি এক সহজ, কম খরচে এবং অত্যন্ত কার্যকর স্বাস্থ্যচর্চা। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org