দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাসার আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুনভাবে আরো কার্যকরী উপায়ের কথা চিন্তা করুন। এমন কিছু ভাবুন যা আপনার অর্থকে সাশ্রয় করবে এবং পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলবে। এখানে দেখুন কিভাবে আপনি আপনার বাসার বর্জ্য, অবাঞ্ছিত খাদ্যসামগ্রীকে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা কিংবা পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে পারেন।
ধাপঃ১- বর্জ্যকে প্রশমিত করুন
- পলিথিনের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করুন
আপনার সামান্য হিসাব অনেক পরিমাণ বর্জ্যকে প্রশমিত করবে। আপনি যদি পলিথিনের বদলে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করে থাকেন তবে পুনরায় এটি ব্যবহার করতে পারবেন। কাপড়ের একটি ব্যাগে একি সাথে অনেকগুলো পণ্য বহন করা যায়, ফলে বাড়তি বর্জ্য সৃষ্টি হয় না।
- সামান্য প্যাকেটজাত খাবার কিনুন
আপনার যদি প্লাস্টিক দ্বারা মোড়ানো খাবার কেনার প্রতি ঝোক থাকে তবে তা পরিহার করুন। কারণ এটি অনেক বর্জ্য তৈরি করে। কম প্যাকেটজাত কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত কিংবা প্লাস্টিক ছাড়া মোড়ানো খাবার কেনার চেষ্টা করুন। তাছাড়া মুদি দোকানের পণ্যগুলো আপনি কাপড়ের ব্যাগেই বহন করতে পারেন।
- বর্জ্যকে মিশ্রসারে পরিণত করুন
বাসায় তৈরি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে বাড়তি বাইরের খাবারের সাথে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য থাকবে না। সরাসরি বাজার থেকে শাকসবজি, তরকারি ও মাছ-মাংস কিনুন, সুপারশপের প্যাকেটজাত পণ্য পরিহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে তৈরি হওয়া বর্জ্য মাটিতে ফেললে তা প্রাকৃতিক সারে পরিণত হবে।
- প্লাস্টিক বোতলজাত পানীয় বর্জন করুন
এটা সত্য যে বোতলজাত পানি ট্যাপের পানি থেকে অনেক বিশুদ্ধ কিন্তু তারমানে এই নয় যে বিশুদ্ধ পানি পাবার এটাই একমাত্র উপায়। আপনি নিজেই পানি ফিল্টার করতে পারেন। কাজের সময় ফিল্টার করা পানি নিজের সাথে রাখতে পারেন। এটি অর্থনৈতিকভাবে ব্যয় সংকোচন তো করবেই, পরিবেশও ভালো রাখবে। কারণ এতে করে প্লাস্টিক বর্জ্য কম তৈরি হবে। আজকাল বাসায় লেমনেড(খনিজ পদার্থমিশ্রিত অম্লমধুর পানীয়বিশেষ) তৈরি করা যায়, প্রয়োজন হলে আপনিও তৈরি করা লেমনেড ব্যবহার করতে পারেন।
- কাগজের ব্যবহার কমান
আপনি যদি কম্পিউটার ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে অনেক কাগজের বর্জ্য তৈরি হয়। মেইলগুলোর প্রিন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগই কাগজের বর্জ্য তৈরি হয়ে থাকে। চেষ্টা করুন বিলগুলো অনলাইনে পরিশোধ করতে। কাগজের পত্রিকা পড়ার চেয়ে অনলাইনে পত্রিকা পড়ার প্রবণতা বাড়ান।
ধাপঃ২- বর্জ্যকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করুন
- আপনার পুরনো কাপড়, ইলেক্ট্রনিক্স কিংবা এমন কোন জিনিস যা আর প্রয়োজন নেই তা ফেলে না দিয়ে কাউকে দিয়ে দিন। সুতা প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানগুলো পুরনো কাপড় গ্রহণ করে। বিদ্যালয়ে দিয়ে দিতে পারেন আপনার পুরনো ইলেক্ট্রনিক্স।
- পুনরায় ব্যবহার উপযোগী এমন ধরনের ধারক কিংবা পাত্র নিজের কাছে রাখুন। ফুড গ্রেড প্লাস্টিক কনটেইনার যা কয়েকবার ব্যবহার করা যায়, তেমন ধরনের বোতল, বক্স এবং ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার শহরের পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানুন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যায় এমন ধরনের জিনিস যেমনঃ প্লাস্টিক কনটেইনার, কাগজ, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম ক্যান কিংবা ফয়েল নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন কিংবা রাখুন।
- ঝুকিপূর্ণ বস্তুগুলোকে ভালভাবে নষ্ট করে ফেলুন। বাসায় এমন অনেক ধরনের জিনিস রয়েছে যা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যায় না যেমনঃ ব্যাটারি, বাল্ব। সেগুলো অব্যবহৃত হওয়ার পর ভালোভাবে নষ্ট করে ফেলুন যেন পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে।
ধাপঃ৩- মিশ্রসারে পরিণত করা
- খাদ্যবর্জ্যগুলো ফেলে না দিয়ে সারে পরিণত করুন। খাদ্যবর্জ্যগুলো খুব তাড়াতাড়ি মাটির সাথে মিশ্রিত হয়ে যায় এবং মাটিতে উৎকৃষ্ট সার তৈরি করে।
- আপনার বাসার আশেপাশে একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করুন যেখানে আপনি মিশ্রসার তৈরি করবেন। সে অংশটি কাঠের বেড়া দ্বারা ঘিরে রাখুন। আপনি কোন বড় আকারের পাত্রেও মিশ্রসার তৈরি করতে পারেন। সেখানে আপনার গৃহের খাদ্যবর্জ্যগুলো ফেলুন।
- পাইলিং কিংবা স্তূপ আকারে মিশ্রসার তৈরি করা কিছুটা কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ৬-৮ সপ্তাহ বর্জ্যগুলোকে স্তূপ আকারে জমাটবদ্ধ করতে হয়। প্রথমে খাদ্যবর্জ্যগুলোকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। সেটি কয়েক ইঞ্চি উঁচু হওয়ার পর কিছুদিন শুকোতে দিতে হবে। তারপর শুকনো এই স্তরের উপর নতুন আরেকটি স্তর কিন্তু সেটি আগেরটির মতো উচু নয় এমনভাবে তৈরি করতে হবে।
- আপনার মিশ্রসারের অংশটির কিছুটা দেখাশনা করতে হবে যেন তা বৃষ্টি কিংবা অন্যকোন কারণে কর্দমাক্ত হয়ে না যায়। এর ফলে আপনি ব্যবহার উপযোগী কার্যকর একটি সার পাবেন যা আপনার পরিবেশ এবং গাছগুলোকে ভালো রাখবে।
তথ্যসূত্রঃ উইকিহাউ