দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ক্যারোইন ক্যাসি একজন মা যিনি গর্ভকালীন সময়ে মাদক গ্রহণ করতেন যার ফলশ্রুতিতে তার গর্ভে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তান বর্তমানে মাদকাসক্তিতে ভুগছেন। তার মেয়ের নাম জর্জিয়া যার বর্তমান বয়স ১১ বছর, জন্মের পর থেকেই সে মাদকাসক্ত।
মিসেস ক্যাসির বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। জর্জিয়া তার গর্ভে থাকতে তার আগের আরো দুটি সন্তান ছিলো। তিনি জানালেন তখন তিনি তাদের প্রতি মনযোগী ছিলেন না, তার বেশিরভাগ টাকাই খরচ করতেন মাদক ক্রয়ের পেছনে, এমনকি মাদক কেনার জন্য তিনি টিভি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তিনি আরো জানালেন তার মেয়ের এই মাদকাসক্তির কারণে তিনি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবেন না। তিনি মাদকাসক্তি থেকে ফিরে এসেছিলেন যখন তার নতুন সন্তানের মুখ দেখলেন। তিনি তার মেয়ে জর্জিয়া ও অন্য সন্তানদের তার জীবনের শুরুর দিকের ভয়ঙ্কর মাদকাসক্ত দিনগুলোর কথা খুলে বলেন। বর্তমানে ক্যাসি মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছে এমন সাতজন মাকে সাহায্য করছেন মাদকের ভয়াল থাবা থেকে ফিরে আসতে। ক্যাসি মনে করেন তিনি তার বাচ্চাদের যত্ন নিতে গিয়ে যেভাবে অবজ্ঞা করেছেন অন্য মায়েরাও যেন তা আর না করে তাই তিনি তাদের সাহায্য করছেন। ক্যাসি ছেলেবেলার দুর্বিষহ সময়ে মাদকের সর্পিলাকার পথে প্রবেশ করেন।
ক্যাসি বলেন তিনি ছিলেন বাবা মায়ের আট সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তার বাবা প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়াতে ভুগতেন। তাছাড়াও তিনি ছিলেন মদ্যপায়ী। মা তাদের সংসারটা টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন কিন্তু তিনি নিজেও হতাশায় ভুগতেন। তার আটবছর বয়সে তার বাবা হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ক্যাসিকে রাখা হয় বাবার দেখাশোনা করার জন্য। ক্যাসির বাবা দুইবছর রোগে ভুগে মারা যান। ক্যাসির বাবার মৃত্যু তার মাকে বেশ আঘাত করে ফলে তিনিও মদ্যপানে লিপ্ত হন। ক্যাসি স্কুল ছেড়ে দেন এবং মাত্র ১৭ বছরে তিনি গর্ভধারণ করেন। তার প্রথম সন্তান নিকোলের জন্মের পর নিকোলের বাবা তাদের ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু তিনি তার মেয়েকে আঁকড়ে ধরে থাকেন এবং তিনি চেষ্টা করেন তার মেয়েকে একটি সুন্দর জীবন দিতে।
কিন্তু সবকিছু উলটপালট হয়ে যায় যখন ক্যাসি তার স্কুল জীবনের সঙ্গীকে খুজে পান। তার এই সঙ্গীটি আগে মাদকাসক্ত ছিল না কিন্তু শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন তার সঙ্গীটি মাদকের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে। প্রথমদিকে তাকে ধূমপানের জন্য আমন্ত্রন জানানো হতো। ক্যাসির কাছে মনে হতো এগুলো ক্যানাবিস। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি বুঝতে পারলেন এগুলো মারিজুয়ানা। তিনি তাদের বলতেন যন্ত্রনানাশক এবং শরীরকে আরামদায়ক করবে এমন কিছু গ্রহন করতে। যার ফলশ্রুতিতে তারা কিছুদিনের মধ্যে হেরোইন গ্রহণ করতে শুরু করে। প্রথমদিকে এটি গ্রহণের ফলে শরীর দুর্বল লাগতো। কিন্তু এরপর শরীরে একটি উষ্ণ আরামদায়ক অনুভুতি হতো। ক্যাসি মনে করতো এটি তেমন ক্ষতি করবে না তাই সে তার বাচ্চার সাথে বিছানায় এটি গ্রহণ করা শুরু করে।
এভাবে সে প্রতিদিন হেরোইন গ্রহণ করতে থাকে এমনকি তার গর্ভে যখন সন্তান ছিল তখনও। তার এই হেরোইন গ্রহণের মাঝে জন্ম নেয় কেইরা বর্তমানে তার বয়স ১৩ বছর। কেইরার জন্মের পরও তিনি হেরোইন ছাড়তে পারেননি। বরং আসক্তির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তিনি মাদক কেনার জন্য অর্থ ব্যয় করতে থাকেন। যার ফলে ঠাণ্ডার সময় তার বাড়িতে উষ্ণতা তৈরির ব্যবস্থা ছিল না। তিনি তার সন্তানদের ভালো খাবারের বদলে সস্থা খাবার দিতেন যেন বাকী অর্থটা মাদকের পেছনে ব্যয় করা যায়। ২০০১ সালে তিনি আবার সন্তান ধারণ করেন এই সময় তার গর্ভে আসে জর্জিয়া। জর্জিয়া তার গর্ভে আসার পর তার মধ্যে একটা পরিবর্তন আসে তিনি চেষ্টা শুরু করেন মাদক ছাড়ার জন্য এক্ষেত্রে তাকে আরো সাহায্য করে বিভিন্ন মিডওয়াইফারী সংগঠন। মিডওয়াফারী সংগঠনের মিডওয়াফরা আলাদাভাবে তার শিশুর যত্ন নেয় এবং তাকে মাদকাসক্ত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করে।
২০০২ সালের আগস্টের ২৩ তারিখ জন্ম গ্রহণ করে জর্জিয়া। ডাক্তাররা বুঝতে পারে জর্জিয়ার শারীরিক সমস্যা তাই তারা মেথাডন ওষুধ প্রয়োগ করে যেন তার শরীর মাদকের বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। তারা ক্যাসিকেও মেথাডন দেয় মাদক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। একসপ্তাহের মধ্যেই ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। একমাস পর ক্যাসি এবং তার শিশুকে হাসপাতাল থেকে মাদকমুক্তভাবে ছাড়া হয়। সৌভাগ্যবশত জর্জিয়া তার মায়ের মাদকাসক্তির ফলে দীর্ঘমেয়াদে তা আক্রান্ত হয়নি। এভাবেই ক্যাসি এবং তার শিশু মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত হয়। উল্লেখ্য যে হেরোইন মাদক জরায়ুতে অবস্থিত প্লাসেন্টায় পৌছে যেতে পারে যা গর্ভকালীন শিশুর ক্ষতি করে।
তথ্যসূত্রঃ ডেইলিমেইল