দি ঢাকা টাইমস ডেস্ক ॥ প্রতি সপ্তাহের মতো আজও আমরা বিশ্বের বিভিন্ন মজার মজার খবর আপনাদের সামনে তুলে ধরবো- আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
লম্বা নাকের আজব বানর
অদ্ভুতদর্শন এই বানরের নাম হচ্ছে ‘প্রবোসিস মাংকি’, এরা বাস করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে। এ বানরকে অদ্ভুদ বলা হয় এর নাকের কারণে। আসলে দেখতে এরা অন্য সব প্রজাতির বানরের মতো হলেও পার্থক্যটা হচ্ছে-এদর নাক। প্রবোসিস বানরের অদ্ভুত আর লম্বা একটা নাক আছে। এটি বেশ কয়েক ইঞ্চি লম্বা আর লালচে-বাদামি রঙের হয়। আর এ নাকের জন্যই বেচারা বানরগুলোকে দেখতে কিম্ভূতকিমাকার লাগে। তবে এ বিশাল নাক এদের কি কাজে লাগে তা এখনও জানা যায়নি। জীববিানীদের ধারণা, নারী আর পুরুষ বানর আলাদা করে চেনার জন্যই এ নাক কাজে লাগে। কেননা, শুধু পুরুষ প্রবোসিস বানরেরই এরকম লম্বা নাক থাকে। তবে নাক ছাড়াও এদের আর একটা অদ্ভুত অঙ্গ আছে। সেটি হচ্ছে এদের বিশাল পেট। বড়ো পেটের প্রাণীরা সাধারণত খাই-খাই স্বভাবের হয়ে থাকে। কিন্তু এদের ব্যাপারটা একদমই উলটো। এই পেটের কারণেই বেচারা বানরগুলো পাকা ফলমূল একদমই খেতে পারে না। কেননা এদের বিশাল পেটের ভিতর হজম প্রক্রিয়াটা খুবই জটিল। আর এদের পেটে প্রচুর গ্যাস থাকে। যে কারণেই বেচারাদের এই দুরবস্থা। তবে পাকা ফলমূল না খেতে পারলেও এরা কিন্তু ফল, বীজ আর গাছের পাতা বেশ মজা করেই খায়। লম্বা নাক আর বিশাল পেট থাকলেও এরা কিন্তু গাছে চড়তে খুবই পটু। অন্যান্য বানরদের চেয়ে এরা বরং আরও দ্রুত গাছে চড়তে পারে। আর এদের আরেকটা বড়ো গুণ হচ্ছে, এরা খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারে।
বিরল আইভরি-বিলড উডপেকার
হাতির দাঁতের মতো ঠোঁটবিশিষ্ট বিপন্ন প্রজাতির কাঠঠোকরার সন্ধানে কাজ করছে নাসা। আইভরি-বিলড উডপেকার নামের এ পাখিটি সম্প্রতি আরকানসাসে দেখা গেছে। এর সন্ধানে নাসা ও মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি একত্রে কাজ করছে। এ পাখির আবাসস্থল বের করার জন্য নাসা এক ধরনের তরঙ্গশক্তি উৎপন্ন করবে যন্ত্রের মাধ্যমে। এ তরঙ্গ পৃথিবীর উপরিস্তরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। গাছের পাতা, ডাল এবং মাটিতে এ তরঙ্গ ফেরত আসবে যন্ত্রে। আর পাখি বিজ্ঞানীরা এ তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে বের করে দেখবে আইভরি-বিলড উডপেকারের আবাসস্থল কোথায়। শিগগিরই এ প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা উদ্যোক্তাদের। এ জন্য কাঠঠোকরা বিষয়ে যাবতীয় তথ্য গবেষকদের হাতে তুলে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ৫০ বছরে আইভরি-বিলড উডপেকার দেখা যায়নি।
অনেক ঝরনার জলপ্রপাত
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সংযোগস্থলে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ইগুয়াজু জলপ্রপাত। উত্তরে ব্রাজিল, দক্ষিণে আর্জেন্টিনা আর পশ্চিমে প্যারাগুয়ে- এ তিন দেশকে ছুঁয়েছে দুটি প্রধান নদী। একটির নাম ইগুয়াজু, আরেকটির নাম পারানা। এ দুই নদীর সঙ্গমের ২২ কিলোমিটার আগে সৃষ্টি হয়েছে এ অনিন্দ্যসুন্দর জলপ্রপাত। ইগুয়াজুকে দেখে অনেকেই জলপ্রপাত বলেন না, বলেন জলপ্রপাতমালা। ইগুয়াজু পারানা নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি করেছে ২৭৫টি জলপ্রপাত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। ব্রাজিল হতে জলপ্রপাতের দিকে আসার পথে বহুদূর আগে সবুজ বনের মধ্য থেকে উপরে সাদা মেঘের দেখা মেলে। প্রায় ৩০ মিটার উঁচু মেঘপুঞ্জকে সবুজ বনের ওপর খুব সুন্দর দেখায়। দূর থেকেও জলপ্রপাতের প্রবল শব্দ কানে এসে লাগে। ইগুয়াজু জলপ্রপাত থেকে সৃষ্টি হয়েছে জলবিন্দুর মেঘ, অদ্ভুত সুন্দর। ব্রাজিলের দিক থেকে আসার সময় দূর হতে মনে হবে হাজার হাজার সাদা বকের পাল বনের প্রান্তে ডানা মেলে যেন ওঠা-নামা করছে। কাছে এলে চোখের ভুল ধরা পড়ে। আসলে ডানামেলা পাখির ঝাঁক নয়, নদীর গতি পাথরে পাথরে বাধা পেয়ে আর জলপ্রপাতের জলের সঙ্গে মিশে গিয়ে সৃষ্টি করেছে এ সাদা মায়াবী জগৎ। ইগুয়াজু নদী বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন রূপে নিচে এসে পড়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছে, এ বিভিন্ন ধাপের ২৭৫টি ঝরনার জল আবার একসঙ্গে মিলে গিয়ে একটা বিরাট জলধারা সৃষ্টি করেছে। পড়েছে প্রায় শখানেক মিটার নিচের এক সরু খাদে। এ সরু খাদটিই মূল ঝরনা। এরই নাম ‘ইগুয়াজু’, ট্যুরিস্টদের ভাষায় ‘গর্জ দু দিয়াবল’ অর্থাৎ ‘দৈত্যের মুখগহ্বর’, দৈত্যের মুখের মধ্যে যে জলধারা পড়ছে তার গভীরতা চল্লিশ মিটার, লম্বায় প্রায় শখানেক মিটার। আর্জেন্টিনার দিক থেকে দেখলে এ একই জলপ্রপাতের আরেক রূপ দেখা যায়। এদিকের রূপ আরও ভয়াবহ, রোমহর্ষক। মনে হবে, নদীর জলধারা সিঁড়ি দিয়ে ধাপে ধাপে নিচে নেমে এসেছে। কোনও কোনও ধাপের উচ্চতা ৩০ মিটার আর সবচেয়ে উঁচু ধাপ ৬০ মিটার। বিভিন্ন ঝরনার বিভিন্ন নাম- কোনওটার নাম ‘দুই বোন’, কোনওটার নাম ‘তিন যোদ্ধা’, ব্রাজিলের রিও থেকে ইগুয়াজুর দূরত্ব এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার। বাসে লাগে ২৪ ঘণ্টা। সাওপাওলো থেকে দূরত্ব এক হাজার ১০০ কিলোমিটার। বাসে লাগে ১৭ ঘণ্টা। সাওপাওলো থেকে বিমানে যাওয়া যায়। লাগে আধ ঘণ্টা।
উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড অফ হ্যারি পটার
হ্যারিকে নিয়ে নতুন করে আর কিছু লিখবেন না বলে আগেই কলম তুলে রেখেছেন রাওলিং। আমাদের মতো মাগ্লদের শেষ আশা-ভরসা বলতে ছিল, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড ডেথলি হ্যালোজ’-এর গল্প নিয়ে তৈরি হওয়া দু’ভাগের সিনেমা। সেই জোড়া সিনেমার শেষটারও মুক্তি পাওয়ার কথা ২০১১ সালে। তারপর পটারম্যানিয়ায় ভোগার মতো উপকরণের অভাবের কথা ভেবে আকুল হচ্ছিল মাগ্লকুল। তাদের সেই দুশ্চিন্তায় জল ঢেলে দিয়ে এবার আসরে হাজির হ্যারি পটার থিম পার্ক। পোশাকি নাম ‘উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড অফ হ্যারি পটার’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোয় তৈরি হওয়া এই থিম পার্কের দরজা জুন মাসের শেষ দিকে খুলে গেল সমস্ত হ্যারি-ভক্তদের জন্য। ২০ একর জমির উপর তৈরি এই থিম পার্কে হগওয়ার্টস স্কুল অফ উইচক্রাফট, হগ্সমিড গ্রাম- সবই কিছুই রয়েছে একদম বইয়ের গল্পের মতো করে সাজানো। এখানকার ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দা ফরবিড্ন জার্নি’, ‘ড্রাগন চ্যালেঞ্জ’-এর মতো রাইডে চেপে ঢুকে পড়া যাবে হগওয়ার্টস কাস্লের অন্দরমহলে। ডাম্বলডোরের অফিস বা গ্রিফিনডোরের কমন রুমেও উঁকি দেওয়া যাবে এসব রাইডের দৌলতে। মুখোমুখি হওয়া যাবে ম্যাজিকের দুনিয়ার ভয়ংকর প্রাণীদেরও, যাদের সামনাসামনি হতে হয়েছে খোদ হ্যারিকেও। ঘোড়া-শরীর আর ঈগল- মুখো হিপোগ্রিফের পিঠে সওয়ার হতে চাইলে চড়তে হবে ‘ফ্লাইট অফ দ্য হিপোগ্রিফ’ রাইটটিতে। পটার দুনিয়ার হাজারও রকমের মেমোরাবিলিয়া মিলবে এখানকার নানা দোকানে। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও চিন্তা নেই। খাবার-দাবারের জন্য আছে ‘থ্রি ব্রুমস্টিক’-এর মতো রেস্টুরেন্ট, যেখানে পাওয়া যাচ্ছে হ্যারি আর তার সঙ্গোপাঙ্গদের প্রিয় খাবার। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তার গল্পের জগৎকে বাস্তবে নিয়ে আসা নিয়ে রাওলিং ভীষণই খুঁতখুঁতে ছিলেন। যতক্ষণ না তিনি সন্তুষ্ট হচ্ছেন, ততক্ষণ হাল ছাড়ননি তারা। পাঁচ বছর সময় লেগেছে এই পার্ক তৈরি করতে। স্বাভাবিকভাবেই বাঘা বাঘা পটারপ্রেমীদের তাক লেগে যাচ্ছে এখানকার রকমসকম দেখে। ব্যতিক্রম নন হ্যারিরূপী ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফও। উদ্বোধনের দিন এখানে এসে চমকে গিয়েছেন তিনিও। সিনেমা তৈরির সময় সেটের কাজও দেখেছেন তিনি। কিন্তু হ্যারির জগৎ যে এভাবে বাস্তব হয়ে সমস্ত ফ্যানের ধরাছোঁয়ার মধ্যে এসে গেছে, সেটা ভেবে উল্লসিত ড্যানিয়েলও। তবে সামান্য অভিমান হয়েছে হ্যারি হয়েছে হ্যারির লন্ডনের ফ্যানদের। তাদের মতে, হ্যারির গোটা দুনিয়াটাই ইংল্যান্ডের পটভূমিতে তৈরি। তাই এরকম পার্ক তৈরির দাবিদার হতে পারে একমাত্র রানির শহরই। কিন্তু অন্যেরা এসবে মাথা ঘামাতে নারাজ। তারা দুনিয়ার প্রথম পটার থিম পার্কের মজা নিতেই ব্যস্ত।
হিম বরফের দেশে
এন্টার্কটিকা ভ্রমণ একটি বিরল অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষিণের স্থলবিন্দু আর্জেন্টিনার উশুয়াইয়া থেকে এন্টার্কটিকাগামী জাহাজে ওঠা যায়। এন্টার্কটিকা যাওয়ার পথে দেখা মিলবে দক্ষিণ মেরু। জাহাজ যতই দক্ষিণে যাবে তখন প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। শুধু চোখে পড়বে জল আর জল। বিগল চ্যানেল পার হতেই বিখ্যাত ও ভয়াবহ ঝঞ্ঝা ও দুলুনির জন্য কুখ্যাত ড্রেক প্যাসেজে পড়তে হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়- বিকাল তিনটা অথবা চারটা বা সাড়ে চারটায় এইচও দ্বীপে অথবা শেটল্যান্ডে জাহাজ প্রথম নোঙর করবে। কিন্তু দেখা গেল শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড হাওয়ায় সেদিন কোথাও নোঙরই করা গেল না। হয়তো পরদিন সকালে জাহাজ প্রথম থামল হাফ মুন আইল্যান্ডে। সেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টা থেকেই ছোট্ট রবার বোটে চড়ে আবার জাহাজে ফিরে আসতে হবে। জাহাজ আবার চলতে শুরু করবে। চলতে চলতে বিকালে হয়তো আর একটা দ্বীপে গিয়ে পৌঁছবে। এবার এই দ্বীপটি হল- ‘ডিসেপশন আইল্যান্ড’, রাতভর জাহাজ চলার পর পরদিন সকালে এসে পৌঁছবে নেকো হারবার দ্বীপে। বিকালে প্যারাডাইস বে আইল্যান্ডে জাহাজ এসে ভিড়তে পারে আবার নাও ভিড়তে পারে। দেখা গেল প্রচণ্ড বাতাস আর ভয়াবহ সব আইসবার্গের কারণে প্যারাডাইস বে-তে জাহাজ ভেড়ার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গেল। জাহাজের দু’পাশে, সামনে, খালি চোখে ও ক্যামেরার লেন্সে তখন যতদূর দেখা যায় শুধুই চোখে পড়বে সম্মুখে যা কিছু আছে সবই যেন পাহাড় দিয়ে ঢাকা। সামনে পাহাড় না বরফ কিছ-ই বোঝা যায় না। তাই জাহাজ কোনদিকে কীভাবে পথ ধরে এগোবে এটাও এক সমস্যা। হয়তো অবশেষে ঠিক হল, এখন আর নোঙর নয়, আইসবার্গের ধাক্কা বাঁচিয়ে আরও অনেকটা এগিয়ে সরু লামিয়ের
চ্যানেল দিয়ে জাহাজ বেরিয়ে যাবে। এইভাবে খুব ধীরগতিতে এগোবার পর আবার হয়তো ঘোষণা করা হবে- প্রবল হাওয়া ও আইসবার্গের জন্য লামিয়ের চ্যানেল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও বাতিল। হয়তো ঠিক হল আরও না এগিয়ে সারারাত অন্য পথে এগিয়ে এবার ড্যাঙ্কো দ্বীপে পৌঁছার চেষ্টা করা হবে। এদিকে রাত দশটা বেজে গেছে- তখন ওখানে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আকাশে, সমুদ্রে, পাহাড়ে, বিশালকায় আইসবার্গে তখনও দিনের আভা। জাহাজ দুলে দুলে চলবে। কেননা,
এন্টার্কটিকায় বাতাস, ঢেউ, বরফ সবগুলোই রয়েছে। এখানে দ্বীপ আছে যেমন- মিক্কেলসেন, এইচও দ্বীপ, কিং জর্জ আইল্যান্ড, রিসার্চ বেস ইত্যাদি। ভয়ানক বাতাস, সেই সঙ্গে তুষারপাত ও বৃষ্টির কারণে প্রায়ই এন্টার্কটিকার কোনও কোনও দ্বীপে জাহাজ নোঙর করা তো দূরের কথা, এমনকি রবার বোটে উঠেও দ্বীপে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই জাহাজে বসেই দ্বীপের দৃশ্য দেখতে হয়। এতটা তুষারাবৃত্ত থাকে যেজন্য ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলাও তখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।