দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রতি সপ্তাহের মতো আজও আমরা বিশ্বের বিভিন্ন মজার মজার খবর আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
ফুলের ঘড়ির শহর
সুইজারল্যান্ডে যত শহর আছে তার মধ্যে জেনেভাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ট্যুরিস্ট ভিড় করে। জেনেভা শহরের সব রাস্তা হাজার হাজার ইলেকট্রিক আলো দিয়ে সাজানো। দিনরাত যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। নানারকম ফুল দিয়ে সাজানো বাগান। সুন্দর ফুল দিয়ে ১২ ফুটের ঘড়িটি সাজানো। সেটা সময়ও দিচ্ছে ঠিক ঠিক। জেনেভা শহর ঘড়ির জন্য জগদ্বিখ্যাত। নামকরা সব ঘড়ির কোম্পানি এখানেই। ট্যুরিস্টরা ভালো ঘড়ি কম মূল্যে পাবে ভেবে লাখ লাখ টাকা খরচ করে। সুইশ লোকেরা ঘড়ির খুব সূক্ষ্ম কাজ ভালোভাবে করতে পারে। সুইজারল্যান্ডে ছেলেমেয়েদের ইংরেজি এবং আরও তিনটি ভাষা শিখতে হয়। উত্তরে জার্মানি, জুরিখ শহর, দক্ষিণে ইতালি এবং পশ্চিমে ফ্রান্স। তাই প্রকৃতপক্ষে এদের তিনটি ভাষা জানা খুব প্রয়োজনীয়। জেনেভাতে দর্শনীয় অনেক জিনিস আছে, এর মধ্যে অন্যতম লিগ অব নেশন্স ভবন। এখানেই রেডক্রস ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের কার্যালয়। এ শহরে ফরাসি কালচারের আধিক্য বেশি। দৈনন্দিন জীবন-যাপন ফরাসি ধাঁচের। ফুটপাত জুড়ে আকাশের নিচে রেস্তোরাঁর ছড়াছড়ি। আসলেই সুইজারল্যান্ড দেশটি ট্যুরিস্টদের স্বর্গ। উঁচু উঁচু পাহাড়, জলাশয় আর গাছপালা মিলে সুন্দর দেখায় শহরটিকে। চারদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তা শহরেই হোক বা গ্রামাঞ্চলেই হোক।
এ সুন্দর দেশে ছুটিতে দলে দলে ট্যুরিস্ট আসে। হোটেল ব্যবসা উন্নতমানের। এটা এদের জাতব্যবসা বললে অত্যুক্তি হবে না। এ দেশের সব ছেলেমেয়ে হোটেল শিক্ষানবিশী করে তা তারা যত বড়লোকের ঘরের হোক না কেন। সুইশ ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসক ও হোটেল রক্ষকের জগৎজোড়া সুখ্যাতি। চাষাবাদ করার জন্য এ দেশের কৃষকরা ধান বীজ নিয়ে আকাশের দিকে বৃষ্টির আশায় চেয়ে থাকে না। বরফে ছ’মাস মাটি সরস রাখে, তাছাড়া পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি লেগেই আছে। সুইজারল্যান্ডের লোকরা পরিশ্রমী এবং উন্নয়নকামী। সুইজারল্যান্ডের জেনেভার লেকের ওপারে ফ্রান্স। দুটো ভিন্ন দেশ হলেও যাতায়াতের কোনো বাধা নেই। পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি
কিছুই নেই।
স্বাস্থ্যকর স্থান : ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ
আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে সাতটি দ্বীপ নিয়ে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ। এরই একটি টেনেরিফ দ্বীপ। টেনেরিফে আছে দুটো বিমানবন্দর। একটা উত্তরে, একটা দক্ষিণে। এই দ্বীপের জনহীন জায়গায় সমুদ্র ঘেঁষে দু’চারটে বাড়ি রয়েছে। এসব বাড়ির সামনে বাঁধানো চত্বর অনেক নিচে উন্মাদ সমুদ্রের উদ্দাম ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে পার্বত্য দেয়ালে। স্পেনের টেনেরিফ দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে যেমন দিনের বেশিরভাগ সময় ঝকঝকে রোদ, উত্তরাঞ্চলে তেমন নয়, সেখানে রোদের চেয়ে বেশি মেঘ, বেশি বৃষ্টি, বাতাসের আর্দ্রতাও অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, উত্তরাঞ্চলে প্রচুর গাছপালা ও বনস্পতি গাছ রয়েছে। এখনও ইউরোপের ডাক্তাররা, বিশেষ করে ব্রিটিশ ও ডাচ চিকিৎসকরা তাদের রোগীদের উত্তর টেনেরিফে হাওয়া বদলের পরামর্শ দেন। বার্ধক্যজনিত বা রক্ত চলাচলঘটিত অসুখ-বিসুখে প্রাচীন এই দ্বীপের উত্তরাঞ্চল এখনও প্রাকৃতিক আরোগ্য নিকেতন। টেনেরিফের দক্ষিণ দিক হয়ে উত্তরের দিকে এগুলে দেখা মেলে রোদ কম, মেঘ বেশি কখনও বা এই মেঘ, এই রোদ, এই শীত, এই হালকা গরম। সবুজ পাহাড় আছে। রাস্তার ধারে রক্তকরবী, শ্বেতকরবী, হলুদ করবীর সারির যেন শেষ নেই। পথ চলতে চলতে একসময় সামনেই দেখা মেলে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ মহাসমুদ্র। কালো বালুকাবেলার পাশেই মাইলের পর মাইল বামনাকার কলাগাছের সারি। কলাকে এখানে বলে প্লাতানো। কলাই টেরেনিফ দ্বীপের প্রধান ফল। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের বাকি ৬টি দ্বীপ হল- লা গোমেরা, লা পালমা, এল হিয়েররো, গ্রান কানারিয়া, ফুয়ের্তে ভেনতুরা এবং লান সারারোতে। এর মধ্যেই টেনেরিফ সবচেয়ে বড়। স্পেনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় টিয়েডে বা তেইদে। এটি টেনেরিফের প্রায় মধ্যস্থলে। এখানে রয়েছে দীর্ঘ পাহাড়িপথ। রুক্ষ পাহাড়িপথ কোথাও আদিম অরণ্যের মধ্য দিয়ে, কোথাও খোলা প্রান্তরে। দীর্ঘ পাহাড়িপথ পেরিয়ে টিয়েডে পৌঁছা যায়। ক্যানারিয়ান মানুষ খুবই অতিথিবৎসল। খোলামনের সহূদয় মানুষ। নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করে। এখানকার এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে জাহাজে যাওয়া যায়। প্রতিটি দ্বীপই খুব সুন্দর। রাত দশটা-এগারোটাতেও একা একা নিশ্চিন্তে রাস্তায় ঘোরা যায়। পর্যটক যারা যান তারা আটলাান্টিকের তীরেই বসে থাকেন। সমুদ্র, পাহাড়, আকাশ এবং তাদের অপরূপ রঙ বদল আর এই নিষ্কলুষ নির্জনতা খুঁজে পাওয়া যায় ক্যানারিয়ান পুঞ্জের প্রতিটি দ্বীপে। যে জন্য এই দ্বীপপুঞ্জকে বলা হয়
‘স্বাস্থ্যকর স্থান’।
পৃথিবীকে অক্সিজেন দিয়েছিল যারা
নীল-সবুজ শৈবাল (Blue green algae) আদিমতম স্বভোজী জীব, পৃথিবীতে ৩০০ কোটি বছরেরও আগে উদ্ভূত। এদের উৎপত্তির আগে পৃথিবীর আবহমণ্ডলে কোনও অক্সিজেন ছিল না। নীল-সবুজ শৈবাল সালোক-সংশ্লেষণ শুরু করলে আবহমণ্ডলে অক্সিজেন সঞ্চারের সূচনা ঘটে।
সব নীল-সবুজ শৈবাল প্রোক্যারিওটিক অর্থাৎ এদের কোষে নেই যথার্থ নিউক্লিয়াস, নিউক্লিওলাস ও কোন নিউক্লীয় আবরণী। এদের প্লাসটিড ও ফ্লাজেলা নেই, নেই যৌনপ্রজনন পদ্ধতি। তবে কোনও কোনও প্রজাতিতে নিউক্লীয় বস্তুর অঙ্গজ সংমিশ্রণ বা অনুজনন নামের এক ধরনের জেনিটিক পুনর্মিশ্রণ ঘটে। নীল-সবুজ শৈবাল নানা প্রকার। এককোষী, মুক্তজীবী, প্লাঙ্কটোনিক অথবা আবদ্ধ। কোনওটি নিয়মিত বা অনিয়মিত কলোনিবাসী, অনেকে বহুকোষী সুতার মতো, শাখায়িত বা শাখাহীন, কারও আছে কৃত্রিম শাখা। সুতার মতো এই শৈবালরা অনেক সময় আঠালো কলোনিও গড়ে তোলে। কোষ বিভাজন, খণ্ডায়ন, হর্মোগোন গঠন, বহুকোষী হর্মোস্পোর বা মাইক্রোস্পোর, ন্যানোস্পোর, এন্ডোস্পোর, অ্যাকিনিট বা হিটারোসিস্টের মাধ্যমে এদের বংশবিস্তার হয়। নীল-সবুজ শৈবাল নানা ধরনের পরিবেশে, তাপমাত্রায়, আলো ও অন্যান্য পরিস্থিতিতে পৃথিবীর সর্বত্রই বিদ্যমান, তবে স্বাদুপানির ক্ষারীয় পরিবেশেই এদের আধিক্য। বাংলাদেশে অর্ধবায়ব, স্থলজ ও জলজ (হ্রদ, পুকুর, ডোবা, ধানক্ষেত, নদী, মোহনা ও সমুদ্র) আবাস থেকে নীল-সবুজ শৈবালের অনেকগুলি গণ ও প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশে অধিকাংশ পুকুর, ডোবা ও অন্যান্য বদ্ধ জলাশয় জৈবিকভাবে দূষিত থাকায় তাতে নীল-সবুজ শৈবাল পানিস্ফুটন ঘটায় এবং প্রায় সারা বছরই পানি নীলচে-সবুজ থাকে। সাধারণত Microcystis flos-aquae ও M. aeruginosa-এর দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি পানিকে মৎস্যচাষ, বিনোদন ও গৃহস্থালির কাজে অযোগ্য করে তোলে। এসব শৈবালের কোষগুলি শেষ পর্যন্ত মরে পচে বিষাক্ত দুর্গন্ধ ছড়ায়। এদের অতিবৃদ্ধিজনিত জলাশয়ের পানিস্ফুটন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। বাংলাদেশে অর্ধবায়ব প্রজাতির শৈবাল সব জায়গায় সহজেই দেখা যায়। বাংলাদেশে গাছের গুঁড়ি, দালানকোঠা, মসজিদ ও অন্যান্য কাঠামোয় ছড়ানো ছিটানো কালচে বা গোলাপি লালচে ছোপ এই প্রজাতিদের উপস্থিতির কারণে হয়ে থাকে। বাংলাদেশে, বিশেষত বর্ষাকালে ভিজা মাটিতে অনেক ধরনের স্থলজ নীল-সবুজ শৈবাল জন্মে। জলজ নীল-সবুজ শৈবালের বহু প্রজাতি সব ধরনের জলজ (স্বাদুপানি, স্বল্পলবণাক্ত পানি ও সামুদ্রিক) আবাসে অঢেল জন্মে। অনেক প্রজাতিই প্লাঙ্কটোনিক এবং কতকগুলি জৈবিকভাবে দূষিত পানিতে পানিস্ফুটন ঘটায়। স্বাদুপানির তুলনায় দক্ষিণের স্বল্পলবণাক্ত আবাসে সংখ্যায় অনেক বেশি। Jahanesbaptistia গণের প্রজাতি কেবল খুলনা ও সাতক্ষীরার চিংড়িচাষের স্বল্পলবণাক্ত পানির পুকুরে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে নীল-সবুজ শৈবালের অনেকগুলি বৈশিষ্ট্যই প্রকৃত ব্যাকটেরিয়ার মতো এবং সেজন্য আজকাল অনেকেই এদের ব্যাকটেরিয়ার দলভুক্ত হিসেবে সায়ানো ব্যাকটেরিয়া বলেন। ব্যাকটেরিয়ার একটি বৈশিষ্ট্য, বিশেষত উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলিতে, বাতাস থেকে মাটিতে ও পানিতে নাইট্রোজেন বন্ধন করার ক্ষমতা। বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য জীবজসার (biofertilizer) হিসেবে নীল-সবুজ শৈবাল ব্যবহূত হয়। Spirulina-র প্রজাতি এখন ‘বিস্ময়কর জীব’ হিসেবে বিবেচিত। এদের কোষে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ৭০%, জীবিত যে কোনও জীবের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া এতে আছে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ লবণ ও অন্যান্য উপাদান। বাংলাদেশের সহজলভ্য জলজ ফার্ন Azolla pinnata-এর অন্তর্বাসী Anabaena azollae বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে, যেজন্য আজকাল ক্ষেতের উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য অ্যাজোলা ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।