দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এমন কথা অবশ্য আগে কখনও শোনা যায়নি। কিন্তু এবার ঠিক এমন একটি খবর সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। এক ব্যক্তি ইসলাম ও হিন্দু একই সঙ্গে দুই ধর্ম পালন করছেন!
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতের মধ্য প্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা হলেন মোহাম্মদ জহির। জন্মসূত্রে তার ধর্ম হলো ইসলাম। কিন্তু বছরভর একই সঙ্গে তার মুসলমানদের দরগাহ শরিফ এবং হিন্দুদের শিব মন্দির দেখাশোনার ভার রয়েছে। তার বিশ্বাস হলো, ‘ধর্মের ভিত্তিতে ঈশ্বরের কোনও রূপভেদ নেই।’
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, হিন্দু বিশ্বাসে শ্রাবণ মাস পবিত্র মাস। সারামাস জুড়ে নানা রূপে পূজিত হচ্ছেন মহাদেব। কিন্তু তাতে সারাবছরের রুটিনে কোনও তারতম্য ঘটেনি জহিরের। এর কারণ হলো ইন্দোরের খান্ডওয়া শিব মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব তার হাতে। আবার তার পাশের দরগা দেখভালের ভারও জহিরের উপরেই রয়েছে।
জানা যায়, মুসলমান পরিবারে জন্ম হয় জহিরের। তবে তারমতে ধর্মের দোহাই দিয়ে ঈশ্বর ভাগ করা তার ধাতে নেই। ওর কাছে যিনি আল্লাহ, তিনিই ভগবান, আবার গড-ও সেই তিনিই। আর তাই ধর্মীয় ভেদাভেদে তার বিশ্বাস নেই। আর তাই মন্দির চত্বর পরিষ্কারের কাজটি হাসিমুখে সারেন জহির। শুধু তাই নয়, মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গের পরিচর্যাও তিনি করেন।
জানা যায়, ভারতের বুরহানপুর হতে ২০ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশের সুবিখ্যাত অসিরগড় দুর্গের কাছে বাড়ি মোহাম্মদ জহিরের। গত ৬ বছর ধরে শিবমন্দির দেখাশোনা করেন। জহির অঝও-এর কর্মী। মন্দির এবং দরগা রক্ষণাবেক্ষণের কাজে তাকে নিয়োগ করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। একই সঙ্গে মন্দির এবং দরগার দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন চল্লিশ বছর বয়সের জহির।
জানা যায়, শিব মন্দিরে কোনও পুরোহিত না থাকায় পর্যটকরা পুজা দিতে এলে জহিরকেই সব কিছু সামলাতে হয়। মন্ত্রোচ্চারণ কিংবা ফুল-মালা অর্পণ, নিজের অজান্তে সর্বঘটে প্রকৃত অর্থে কাঁঠালি কলা হয়ে উঠেছেন জহির। আবার মন্দিরের কাজ সেরে মাত্র ১০০ মিটার দূরের দরগায় পৌঁছান জহির। ওই সৌধটির দায়িত্বেও রয়েছে অঝও। তাই দরগা চত্বর সাফসুতরো রাখা জহিরের নিত্যদিনের কাজের অংশ।
জহিরের ধারণা, পেশাসূত্রে অভিনব জোড়া দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি নিজের ৫ সন্তানকে সাম্য এবং ঐক্যের আদর্শে লালন-পালন করতে পারবেন। তিনি মনে করেন, অহংকার ত্যাগ করে ভালোবাসার হাত ধরলে ঘৃণা এবং বৈষম্য দূর হবে, তখন সমাজে হিংসা হানাহানি থাকবে না।