দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের অজ পাড়া গাঁয়ের ছেলে মাহফুজুর রহমান মালয়েশিয়ার শীর্ষ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালায়া ইউনিভার্সিটির ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
বাংলাদেশের গ্রামের একজন সাধারণ ছেলে হয়ে মালয়েশিয়াতেই পড়ালেখা করে মালয়েশিয়ার শীর্ষ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালায়া ইউনিভার্সিটির ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন মো. মাহফুজুর রহমান।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, মালয়েশিয়ার এক নম্বরে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এশিয়ায় ২৭তম ও বিশ্বে এর অবস্থান ১৪৬ নম্বরে। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় নয়, মাহফুজুর রহমান ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে মালয়েশিয়ার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতেও (এমএসইউ) কাজ করছেন। বাংলাদেশ থেকে এসে মালয়েশিয়াতেই উচ্চশিক্ষা নেন মাহফুজুর রহমান। তিনি পড়াশোনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে (আইআইইউএম) বিবিএ বিভাগে ২০০৬ সালে ভর্তি হন মাহফুজুর রহমান। স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন ২০১০ সালে। ভালো ফলাফল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র ওভারঅল, সেরা ছাত্র একাডেমিক (ফেকাল্টি অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, আইআইইউএম) ও সেরা ছাত্র বিবিএ বিভাগ, এই তিন পুরস্কার পান মাহফুজুর রহমান।
তাঁর কৃতিত্ব রয়েছে আরও। পুরস্কার হিসেবে মালয়েশিয়ার শিক্ষামন্ত্রীর নিকট হতে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট পান মাহফুজুর রহমান। তিনি বিবিএ পড়ার সময় সবগুলো সেমিস্টারে ডিন (ভালো রেজালটের জন্য) তালিকাভুক্ত ছিলেন। মাহফুজুর রহমান ২০০৭ ও ২০০৮ সালে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড (উপাচার্যের পুরস্কার) পেয়েছেন।
শুধু এটুকুই নয়, ইন্টার স্টুডেন্টস রেসিডেন্ট কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১০ এ আইআইইউএমের সেরা ৫ বক্তার একজন হন বাংলাদেশের এই কৃতি সন্তান মাহফুজুর রহমান। তিনি ২০০৭-০৮ ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ’র ছাত্র থাকাকালে স্টুডেন্ট রেসিডেন্ট কলেজ ৫ (মাহাললা আলী)-এর ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
মাহফুজুর রহমান এরপর ২০০৯-১০ সালে বিবিএ অ্যাসোসিয়েশনের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ২০০৮-০৯ সালে স্টুডেন্ট সারকেল ১,২ ও কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটির স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর ছিলেন। ২০০৭ সাল হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত স্টুডেন্ট লার্নিং অ্যান্ড ইনহ্যান্সিং ইউনিটে শিক্ষকতা ও স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাহফুজুর রহমান।
মাহফুজুর রহমান পড়ালেখার পাশাপাশি মোটিভেশনাল স্পিকার, রিসার্চ অ্যাসিসটেন্ট, টিচিং অ্যাসিসটেন্টসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের ১০ মার্চ হতে ১৭ মার্চ তিনি ইংলিশ ক্যাম্পে স্টুডেন্ট ফ্যাসিলেটর হিসেবে থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন।
মাহফুজুর রহমান বিবিএ শেষে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে এনডাউমেন্ট ফান্ড (বৃত্তি) পান। বিবিএতে প্রথম বিভাগ থাকায় মাস্টার্স ছাড়াই মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্সে পিএইচডি করার সুবর্ণ সুযোগ পান মাহফুজুর রহমান। এরপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রাইট স্পার্ক স্কলারশিপ পেয়ে পিএইচডি শুরু করেন মাহফুজুর রহমান। তিনি ২০১৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মাহফুজুর রহমান পিএইচডি করার সময় শিক্ষা গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালে মালায়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সেন্টার (আইএসসি) একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডও পান। বাংলাদেশ স্টুডেন্ট নাইট (বিএসএন) ২০১৫-এ তিনি ‘বিএসএন একাডেমিক অ্যাওয়ার্ড ফর দা ক্যাটাগরি অব ডকটোরাল’ স্টুডেন্ট অর্জন করেন। একই সঙ্গে ম্যাক্সিস ও হটলিংক ‘উইন টু মার্কেট’ আইডিয়া চ্যালেঞ্জও জেতেন মাহফুজুর রহমান।
তাঁর অনেক নিবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও তাঁর গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের এই কৃতি সন্তান মাহফুজুর রহমান বিয়েভিরিয়াল ফাইন্যান্স নিয়ে কাজ করছেন।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের এই কৃতি সন্তান মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার নেপা ইউনিয়নের বাগাডাঙ্গা গ্রামে। তাঁর বাবা মো. আজিজুর রহমান (মুকুল) পেশায় একজন কৃষক। তাঁর মাতা দাউলাতুন্নেছা বেগম একজন সাধারণ গৃহিণী। দুই ভাই (মাসুম) ও এক বোনের (সীমা) মধ্যে তিনি সকলের মধ্যে ছোট।
সংবাদ মাধ্যমকে এক প্রতিক্রিয়ায় মাহফুজুর রহমান বলেছেন, একজন ব্যক্তি সঠিক মনোভাব, একাগ্রতা, সততা ও বিশ্বাস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। পারিবারিক অবস্থা, বাবা-মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা, জন্মস্থান যাই হোক না কেনো তিনি সফল হবেনই। আমার মতো একজন সাধারণ গ্রামের ছেলে যদি মালয়েশিয়ার প্রথম সারির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী এর চেয়ে আরও অনেক ভালো কিছু করতে পারে বলে আমি মনে করি।’
সত্যিই মাহফুজুর রহমান আমাদের দেশের জন্য গর্ব। তিনি নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দিয়ে শিক্ষা জীবনে যে সাফল্য অর্জন করেছেন তা সকলের জন্যই অনুকরণীয় হতে পারে।