দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে ভবিষ্যতে গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সেই কারণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
সমগ্র বিশ্বে বর্তমানে শক্তির প্রধান উৎস হলো ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি। মানব সভ্যতায় এগুলোর অবদানও ব্যাপক। গ্রামের কুঁড়েঘর হতে শুরু করে আধুনিক সভ্যতার পরিবহন ব্যবস্থা-সর্বত্রই রয়েছে এর ভূমিকা। তবে হতাশার বিষয় হলো, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ খুব বেশি ঘটছে। মোটর গাড়ি, উড়োজাহাজ, পানি জাহাজ, ট্রেন চালাতে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়ে থাকে। মোটর গাড়ি এবং কলকারখানার নির্গত ধোঁয়ায় ক্রমেই বাড়ছে উষ্ণায়ন। এভাবে চলতে থাকলে এই পৃথিবী এক সময় বাসযোগ্যতা হারাবে।
অনেক দেশ তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে গ্রীন এনার্জির দিকে ঝুঁকছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য ভারত, নরওয়ে ও ফ্রান্সের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশের পক্ষ হতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গ্যাস ও ডিজেলের ওপর হতে নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চায় তারা। জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি তৈরির ওপর জোর দিতে চলেছে এসব দেশ। সবুজ জ্বালানি বিষয়ে নিজেদের আন্তরিকতা প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কানাডা, নরওয়ে, জার্মানি, ভারত, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডস। বিশ্বের উৎপাদিত বিদ্যুৎনির্ভর গাড়ির ৯৫ শতাংশই বিক্রি হয় উপরোক্ত ১০টি দেশে।
ব্রিটেনের পক্ষ হতে সমপ্রতি বলা হয়, দেশকে পরিবেশ দূষণের হাত হতে রক্ষা করতে ২০৪০ সালের মধ্যে গ্যাস ও ডিজেল চালিত গাড়ি উৎপাদন হতে সরে আসতে চায় তারা। ২০৫০ সালের মধ্যে সড়কে কোনো ডিজেল চালিত গাড়ি চলতে পারবে না। ওই সময় সব গাড়িকে দূষণের পরিমাণ শূন্য মাত্রায় রাখতে হবে। ব্রিটেনের পরিবেশ বিষয়ক সেক্রেটারি মিচেল গোভে বলেন, দূষণের হাত হতে নতুন প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। জ্বালানি হিসেবে ভবিষ্যতে ডিজেল ও পেট্রোল নিষিদ্ধ করা হবে। আইএইচএস মার্কেটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক স্টিফেনি ব্রিনলি বলেছেন, এই পদ্ধতি হতে বের হয়ে আসতে হলে প্রথমেই রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। সরকার আইন করলে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তা মেনে নিতে বাধ্য হবে।
এর কিছুদিন পূর্বে ফ্রান্সের পক্ষ থেকেও একই ধরনের ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সতর্কতা মাথায় রেখেই ২০৪০ সালের মধ্যে গ্যাস-ডিজেল চালিত গাড়ি উৎপাদন বন্ধ করে দেবে ফ্রান্স। ওই সময়ের পর গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু বিদ্যুৎচালিত বা অন্য সবুজ জ্বালানির গাড়ি বিক্রি করতে পারবে।
ফ্রান্সের পরিবেশগত পরিবর্তন বিষয়ক কমিটির প্রধান নিকোলাস হুলোট এ বিষয়ে বলেছেন, ফ্রান্সের মোট যানবাহনের মাত্র ৪ শতাংশ বিদ্যুৎ, হাইব্রিড ও বিকল্প জ্বালানির উপর নির্ভর। তবে আশার কথা, এ বছরের প্রথম তিন মাসে বিক্রি হওয়া মোট গাড়ির ২৫ শতাংশই ছিল সবুজ জ্বালানিনির্ভর গাড়ি। এটাই প্রমাণ হচ্ছে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে সবুজ জ্বালানিনির্ভর গাড়ি উৎপাদন এগিয়ে আসছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও। এই লক্ষ্য নির্ধারণের কারণে অগ্রগামীতে বিশ্ব বাজারেও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম ফ্রান্সের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও।
ভারতও একই বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। ভারতের পক্ষ হতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের প্রত্যেক গাড়িতে বিদ্যুৎনির্ভর জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশেও এখন থেকেই এ বিষয়গুলো চিন্তা-ভাবনায় আনা দরকার।