দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘রোহিঙ্গাদের গ্রাম পোড়াচ্ছে সেনাবাহিনী’। রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়ে পালাচ্ছে বলে মায়ানমার যে অভিযোগ করেছে সেটি মোটেও ঠিক নয়।
রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী যে পরিকল্পিতভাবেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে তার অনেক প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।
স্যাটেলাইট হতে তোলা রাখাইন রাজ্যের অনেক ছবি বিশ্লেষণ করে অ্যামনেষ্টি বলেছে যে, সেখানে গত তিন সপ্তাহে আশিটিরও বেশি স্থানে বিশাল এলাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোই এই জঘন্য কাজটি করছে বলে অ্যামনেষ্টি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাখাইনে মিয়ানমার সরকারের পোড়ামাটি নীতির ওপর যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে রিপোর্ট দিয়েছে তা পড়লে বিচলিত হতে হবে।
অ্যামনেস্টি বলেছে, স্যাটেলাইটে তোলা ছবি, স্যাটেলাইটে আগুন সনাক্ত করতে পারে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও ওই অঞ্চল হতে পাওয়া ছবি এবং মানুষের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি দেখতে পেয়েছে যে, গত ২৫ অাগস্টের পর হতে মোট ৮০টি স্থানে ব্যাপক মাত্রায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এমন সংঘবদ্ধ দলগুলো একসঙ্গে মিলে রোহিঙ্গাদের উপর এই জ্বালাও-পোড়াও চালাচ্ছে। তারা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা পলায়নপর মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিও চালিয়েছে।
অ্যামনেস্টির একজন কর্মকর্তা তারানা হাসান বলেছেন, তার ভাষায়, এটা পরিষ্কার যে সুপরিকল্পিতভাবেই এসব সহিংসতা চালানো হচ্ছে। প্রমাণ হিসেবে অ্যামনেস্টি বলেছে, যেসব স্থানে আগুন দেওয়া হয়েছে সেই জায়গাগুলোর আগের চার বছরের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তারা কোনো অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখতে পাননি। বেছে বেছে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতেই আগুন দেওয়া হয়েছেদ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যেসব গ্রামে রোহিঙ্গা ও রাখাইনরা পাশাপাশি বাস করে, সেখানে রাখাইন বাড়িগুলো আগুনের হাত হতে বেঁচে গেছে বলে অ্যামনেস্টি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আজ আরও একদফা বেড়েছে।
লন্ডন সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন যে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্মী বাহিনীর সহিংসতা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
মি. টিলারসন আরও বলেছেন, অং সান সুচি যে কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, সেটি আমরা বুঝতে পারছি। জাতিগত পরিচয়ে বাইরে গিয়ে মানুষের সঙ্গে আচরণ কী হবে আমরা সবাই সেটি জানি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তাই সমর্থন করে। তবে এই সহিংসতা অবশ্যই থামাতে হবে, মানুষের ওপর এই নির্যাতন যে কোনো ভাবেই হোক থামাতেই হবে। অনেকেই বলছেন, এটা জাতিসত্তা নির্মূলের ঘটনা, একেও থামাতে হবে বলে মি. টিলারসন উল্লেখ করেছেন।
লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে মি. টিলারসনের পাশে ছিলেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে মিয়ানমারের প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাধর নেতা অং সান সুচিকেই তার নৈতিক ক্ষমতার ব্যবহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেছেন, অং সান সুচি যেসব মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, যেভাবে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই জন্য তার প্রতি আমার প্রশংসা কারো কথায় কমে যাবে না। আমি এও জানি বিশ্বব্যাপী বহু মানুষও একইভাবে তার গুণমুগ্ধ। তবে রাখাইনের মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য মিস সুচিকে এখন তার নৈতিক কর্তৃত্ব কঠোরভাবে ব্যবহার করতে হবে বলে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।