দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাব কমায় জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করা হলেও কিছু কিছু স্থানে স্থানীয় পর্যায়ে আবারও ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ। যে কারণে ইউরোপে নতুন রূপে এই মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
পশ্চিম জার্মানির এক লাখ তিন হাজার বাসিন্দার ছোট এক শহর গ্যুটার্সলো। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে এখন নতুন করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এই শহরের নাম।
সম্প্রতি সেখানে একটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ৭ হাজার কর্মীর মধ্যে ১ হাজার ৫৫০ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ ধরা পড়েছে। বাকিদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার শহরের সমস্ত স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। গুটার্সলো পড়েছে মূলত জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়াতে। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট গ্যুটার্সলো ও তার পার্শ্ববর্তী বারেনডর্ফ শহরে লকডাউন ঘোষণা করেছেন।
জার্মানির আরও বেশ কয়েকটি শহরেও স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। কোলন শহরের ৩৭০টি বাড়ি কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হয়। ১২০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গ্যোটিঙ্গেনের একটি বহুতল ভবনকে লকডাউন করা হয়। একইভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কয়েকটি চার্চে।
এমন এক পরিস্থিতি শুধু যে জার্মানির তা নয়। লকডাউন শিথিলের পর স্থানীয় পর্যায়ে নতুন করে আবারও করোনা ভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়েছে ইউরোপের প্রায় সব দেশগুলোতে। ওয়েলসে একটি পোলট্রি খামারে ১৭৫ জন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন করোনা ভাইরাসে। সেখানে লকডাউন করার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ। কারখানাগুলোতে এমন ঘটনা ঘটেছে আরও বেশ কয়েকটি স্থানে।
ওয়লসের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. গিরি শংকর বলেন, ‘লকডাউন তুলে নেওয়ার কারণে এমন গুচ্ছ সংক্রমণ ঘটছে। এটা প্রত্যাশিতই বলা যায়।’ এতে অবাক না হয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার উপর জোর দেন তিনি।
অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার কাছের এক নার্সিং হোমেও কয়েকজনের করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে শুরুর দিকে সংক্রমণ ঠেকাতে পারলেও বর্তমানে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছে ইসরায়েল। প্রতিদিন তিনশ জন সেখানে শনাক্ত হচ্ছেন করোনা ভাইরাসে। ৫ ভাগের দুই ভাগ স্কুল আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, সবার আচরণের পরবির্তন না ঘটলে আবারও লকডাউন আরোপ করা হতে পারে ইসরায়েলে।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ-এর হানা সামাল দিতে লুক্সেমবুর্গের সরকার দেশটির সব মানুষের করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ৬ লাখ ২৮ হাজার মানুষকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে এই করোনা পরীক্ষা চালানো হবে। উদ্দেশ্য এর মাধ্যমে নতুন ‘হট স্পটগুলো’ চিহ্নিত করা ও সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।