দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন ওষুধ কোম্পানি মডার্না ও ফাইজারের তৈরি কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত ধাপে ৬০ হাজার মানুষের দেহে প্রয়োগ শুরু হচ্ছে।
ইতিপূর্বে করোনার সম্ভাব্য কোনো ভ্যাকসিন এতো মানুষের দেহে পুশ হয়নি। এই বিষয়ে মডার্না সোমবার পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিয়ে বলেছে যে, বছর শেষেই তাদের ভ্যাকসিন সবাই ব্যবহার করতে পারবেন।
কোনো রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়। চূড়ান্ত ধাপে হাজার হাজার মানুষের দেহে গণহারে এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করে মূলত দেখা হয় সবার ব্যবহারের জন্য সেটি কার্যকর ও নিরাপদ কিনা। সফল হলে তবেই ভ্যাকসিনটি গণমানুষের জন্য ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বহুল প্রতীক্ষিত এই ভ্যাকসিন পরীক্ষা কার্যক্রমকে একটি মাইলফল হিসেবেই দেখা হচ্ছে। শেষ ধাপের এই পরীক্ষায় ৩০ হাজার জনের অর্ধেক স্বেচ্ছাসেবীকে এই ভ্যাকসিনটি দেওয়া হবে; বাকিরা পাবেন প্ল্যাসেবো।
অপরদিকে, মার্কিন আরেকটি ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট কোম্পানি ফাইজার বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ১২০টি স্থানে তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। মার্কিন এই কোম্পানিও বিশ্বে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করছে বলে জানা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসি সম্মেলনে বলেছেন যে, ভ্যাকসিনোলজির ইতিহাসে আজ আমরা সত্যিকারের এক ঐতিহাসিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে চলেছি।
তিনি আরও বলেন, একেবারে মৌলিক বিজ্ঞান হতে বৃহৎ পরিসরের তৃতীয় ধাপে সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার পরীক্ষায় পৌঁছানো ও ভ্যাকসিন তৈরিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনই তড়িঘড়ি করেনি।
আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন কার্যকর হবে কিনা সে বিষয়ে মডার্নার গবেষকরা বলতে পারবেন বলে ধারণা দেন ফাউসি। তিনি বলেছেন যে, এটি অবশ্য এক ধরনের সম্ভাবনা। তবে শীঘ্রই এই বিষয়ে জানা যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন তিনি।
অপরদিকে, ফাইজারের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী অক্টোবরের মধ্যেই মানবদেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চাইতে সক্ষম হবেন বলে প্রত্যাশা করছে এই কোম্পানিটি।
ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই দুই কোম্পানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, নজিরবিহীন গতিতে ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা এগিয়ে নেওয়া হলেও এর সুরক্ষার ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হয়নি। ফাউসি বলেছেন, ভ্যাকসিনের সুরক্ষা বা বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডের ক্ষেত্রে কোনো রকম আপস করা হবে না।
মার্কিন এই ভ্যাকসিনটি কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজ প্রয়োগ করা হবে। পরে ভ্যাকসিন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীরা নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা অসুস্থ হয়ে যান কিনা তা যাচাই করে দেখবেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
তৃতীয় ধাপের এই পরীক্ষায় ভ্যাকসিনটি সফল হলে বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডোজ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে মডার্না।
২০২১ সালের মধ্যে মার্কিন এই কোম্পানি ১ বিলিয়ন ডোজ উৎপাদন করবে বলেও জানিয়েছে। বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা করতে মডার্নাকে আরও ৪৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।