ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঈদের বাড়তি চাপ সামলাতে এবার ৫ ঘাটে ৪০টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঈদে বিআইডব্লিউটিসি নিয়ন্ত্রিত ফেরিঘাটগুলোতে যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। ঈদের সময়ে যানবাহনের বাড়তি চাপ সামলাতে ১৪টি রো-রোসহ পাঁচ ঘাটে ৪০টি বিভিন্ন আকারের ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের তিন দিন আগে-পরে সব ফেরিঘাট দিয়ে অত্যাবশকীয় পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া সব ধরনের ট্রাক পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় ঈদের সময়ে ফেরিঘাটগুলোয় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় ঘাটের শৃংখলা বজায় রাখতে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬টি জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অতীতের চেয়ে বেশি এবং ত্রুটিমুক্ত ফেরি রাখা হয়েছে। বর্তমানে এ ঘাটে ১০টি রো-রো ও ৩টি কে-টাইপ ফেরিসহ মোট ১৩টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদের আগে এ ঘাটের ফেরি বহরের সঙ্গে আরও একটি রো-রো ফেরি যোগ হবে। মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি সংকট না থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ডুবোচর। ডুবোচরের কারণে কবুতরখোলার চ্যানেলটি যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ রুটে প্রতিদিন দুটি রো-রোসহ মোট ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। মেঘনার ভাঙন অব্যাহত থাকায় বারবার ঘাট স্থানান্তর করায় চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুটে ফেরি চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এ রুটে মাত্র দুটি ফেরি চলাচল করছে। ঈদের সময় ফেরি সংখ্যা না বাড়ালে যাত্রী দুর্ভোগ বাড়বে বলে সূত্র জানায়।
ঁজানা গেছে, দেশের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। প্রতিদিন ফেরিঘাট দুটি দিয়ে কম করে হলেও ৩ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। ঈদকে ঘিরে এ যানবাহনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজারে। ২৪ ঘণ্টার এক জরিপে দেখা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪৯৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে সংস্থার আয় হয়েছে ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭ টাকা। ঈদের আগে এ রুট দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার করে যানবাহন পারাপার হয়। আয়ের দিক দিয়ে কম করে হলেও প্রতিদিন ৬৫ লাখ টাকা হবে। বর্তমান সময়ে নদীপথে তীব্র সে াত থাকায় ফেরিগুলো পারাপারে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র এরিয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, পহেলা আগস্ট থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে মাত্রারিক্ত সে াত থাকার কারণে যাতায়াতে সময় বেশি লাগছে। এতে জ্বালানিও বেশি লাগছে। স্বাভাবিক সময়ে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যেতে একটি রো-রো ফেরির সময় লাগে ৩৬ মিনিট। বর্তমানে সময় লাগছে ৪৫ মিনিট। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগে জ্বালানি লাগত ৫৮ লিটার, বর্তমানে লাগছে ৮৫ লিটার করে। পক্ষান্তরে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ফিরতে একটি রো-রো ফেরির সময় লাগত ৩৩ মিনিট আর জ্বালানি ব্যয় হতো ৫৮ লিটার। বর্তমানে সময় লাগছে ৪১ মিনিট আর জ্বালানি ব্যয় হচ্ছে ৭৭ লিটার।
অপরদিকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রায় পাঁচ বছর পর পাটুরিয়া-কাজিরহাট রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হলেও প্রথম থেকেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। সার্ভিস চালু হওয়ার প্রথম এক মাসেই লোকসান হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। দুই ঘাটের দূরত্বের কারণে অতিরিক্ত তেল খরচ, যানবাহনের অভাবে খালি ফেরির ট্রিপ দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে এ লোকসান হচ্ছে বলে বিআইডব্লিটিসি সূত্রে জানা গেছে। তবে কাজিরহাট ঘাটটি দশ কিলোমিটার ভাটিতে খড়েরচরে সরিয়ে আনতে পারলে এ রুটটি লাভজনক হবে বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাটুরিয়া থেকে কাজিরহাটের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। কবরী ও কপোতি নামে দুটি কে-টাইপ ফেরি দিয়ে এ রুটে যানবাহন পারাপার শুরু হয়। প্রতিটি ফেরি একসঙ্গে আট থেকে দশটি ট্রাক পারাপার করতে পারে। প্রতিদিন প্রতিটি ফেরি তিনটি করে ট্রিপ দেয়। কবরী ফেরির মাস্টার অফিসার মোঃ আসুদুল ইসলাম জানান, পাটুরিয়া থেকে কাজীরহাট ফেরিঘাটের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। নদী পার হতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। বর্তমানে নদীতে তীব্র সে াত থাকায় সময় আরও বেশি লাগছে। এর ফলে তেল খরচ আরও বেড়ে গেছে।
এদিকে খবরে বলা হয়েছে, মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। অসংখ্য ডুবোচর জেগে ওঠার কারণে কবুতরখোলার চ্যানেলটি যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন। বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ফেরি চলাচলের একমাত্র কবুতরখোলার চ্যানেলটি সরু হয়ে গেছে এবং নদীতে পানি হ্রাস পাওয়ায় ডুবোচর দেখা দিয়েছে। তাই ফেরি চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। বালু ঘেঁষে ঘেঁষে ফেরি চলাচল করছে। বর্তমানে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে ফ্লাট ফেরি ৭টি, কে-টাইপ ৩টি, মিডিয়াম ২টি, রো-রো ২টি, ভিআইপি ১টি। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাড়ির চাপ বাড়লে ঈদ-পূর্ব মুহূর্তে কে-টাইপ ফেরির সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
এদিকে জানা যায়, মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে বারবার ঘাট স্থানান্তরের কারণে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। কোন কোন সময় মাঝ নদীতে ফেরি রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে ঈদের আগে এ ধরনের সমস্যায় ঘরমুখো মানুষসহ যাতায়াতকারী যানবাহন ও যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। এ রুটে মাত্র দুটি ফেরি ৬ বার পারাপার করছে যানবাহন। ফলে স্বাভাবিক সময়ে ঘাটের উভয় তীরে প্রচুুর যানবাহন আটকে থাকছে। ঈদের সময়ে এ ঘাটে ফেরি সংখ্যা না বাড়ালে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বরিশাল, ঝালকাঠিসহ ১২টি জেলার পূর্বাঞ্চলে সহজ যোগাযোগের জন্য এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেটসহ ১২টি জেলার দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ ফেরিঘাটে ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিস চালু করে। তখন ছোট তিনটি ফেরি এ সড়কে চলাচল করে। পরে সড়কটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে এখানে ২টি মধ্যম ফেরি দেয়া হয়। বর্তমানে চাহিদা সত্ত্বেও কেতুকী ও কস্তুরী নামে মাত্র ২টি ফেরি চলাচল করছে। এই ফেরি ২টি প্রতিদিন তিনবার যানবাহন নিয়ে আসা-যাওয়া করছে। প্রতি ট্রিপে একটি ফেরি ছোট-বড় মিলিয়ে ১২টি যানবাহন পারাপার করছে। বিআইডব্লিটিসি সূত্রে জানা যায়, ভাঙনের কারণে ঘাটের জেটি ওঠানো-নামানো করতে হয়।
বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার এ মহাসড়কে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার নৌপথে ৪০ নটিক্যাল মাইল পাড়ি জমাতে রয়েছে দুটি ফেরি রুট। একটি হচ্ছে বরিশালের লাহেরহাট থেকে ভোলার ভেদুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ১৫ নটিক্যাল মাইলের ফেরি রুট। অপরটি হচ্ছে ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার মজুচৌধুরী ঘাট পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮ নটিক্যাল মাইল। ভেদুরিয়া-লাহেরহাট ফেরি রুট চালু হয় ২০০১ সালের ১২ জুলাই। অপরদিকে ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে ইলিশা-মজুচৌধুরী রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয় ২০০৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। বর্তমানে লাহেরহাট-ভেদুরিয়া রুটে দোলনচাপা ও অপরাজিতা ফেরি দুটি চলাচল করছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১০ ট্রিপে আয় হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তেল খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে এ রুট থেকে আয় হয় প্রায় ৬ লাখ টাকা।
লাভজনক খাত হলেও এ রুটের উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। শীত মৌসুমে মাত্র ৩-৪শ’ ফুট স্থান ড্রেজিং না করায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে অতিজোয়ারে ফেরিঘাট প্লাবিত হয়। প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা ফেরিতে লোড-আনলোড বন্ধ থাকে। উভয় পাড়ে অতিজোয়ারের সময় হাইলেভেল ঘাট ব্যবহার করার কথা থাকলেও হাইলেভেল ঘাটে পন্টুন বা গ্যাংওয়ে স্থাপন করা হয়নি। ফলে ফেরি ভিড়তে হচ্ছে লো-লেভেল ঘাটেই। আর এ কারণে পূর্ণিমা বা অমাবস্যার অতিজোয়ারে ফেরিঘাট পানিতে তলিয়ে থাকে। ওই সময় প্রতিদিন ট্রিপ সংখ্যা কমে যাওয়ায় আয়ও কমে যাচ্ছে বলে জানান সহকারী ম্যানেজার সিহাবউদ্দিন। এছাড়া নৌমন্ত্রী শাজাহান খান আশ্বাস দিলেও এক বছরেও কোন ঘাটে নির্মাণ করা হয়নি যাত্রী ছাউনি। যে কারণে এই ভরা বর্ষা মৌসুমে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।