দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বজুড়ে স্তন ক্যান্সার একটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। বিশ্বের সকল উন্নত দেশ থেকে শুরু করে প্রায় সকল অঞ্চলেই এই স্তন ক্যান্সারের বিস্তার ঘটেছে। আজ জেনে নিন স্তন ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচতে করণীয়।
বর্তমান বিশ্বে নারীদের একটি মহা আশংকার নামই স্তন ক্যান্সার। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এক অভূতপূর্ব গতিতে। সম্প্রতি স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানা এর সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য নানা ধরনের ক্যাম্পেইন এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে বিভিন্ন ধরণের সংস্থা ও পাশাপাশি সাধারণ মানুষ। তাই আমাদের সকলকে স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং করার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে যার ফলে সহজেই স্তন ক্যান্সার নামক রোগ থেকে আমাদের নারীরা রক্ষা পেতে পারে।
প্রত্যেক মেয়েদের অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা একবার স্তন পরীক্ষা করানো অথবা স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং করানো উচিত প্রত্যেক দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে। স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। নিয়মমাফিক স্ক্রিনিং করানোর ফলে স্তন ক্যান্সার থেকে আগেই সঠিক মুক্তিলাভ সম্ভব। স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কয়েকটি উপায় রয়েছে যার মধ্যে একটি হল প্রতি মাসে একবার নিজেকে নিজে পরীক্ষা করে নেওয়া। ২০ বছর বয়স থেকে নিজের স্তনের অস্বাভাবিকতা কে লক্ষ করা মাত্রই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যদি লক্ষ্য করা হয় যে স্তন অস্বাভাবিক কোনো আকারের অথবা অস্বাভাবিক কোনো কর্মকাণ্ড ঘটছে তাহলে কোন কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া বয়স ৪০ থেকে ৩৯ বছর বয়সে দুই থেকে তিন বার পরীক্ষার পাশাপাশি যদি আপনার বয়স ৪০ বছর হয়ে যায় অথবা ৪০ বছর অতিক্রম করে তাহলে প্রত্যেক বছর একবার করে স্তন পরীক্ষা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাফি এমআরআই পরীক্ষা গুলো করতে হবে। উক্ত পরীক্ষায় যদি কোন প্রকার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এফএনএসি করে রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে। এসব পরীক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের সঠিক পর্যবেক্ষণের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে।
স্তন ক্যান্সারের পূর্বাভাস পাওয়া অথবা স্ক্রিনিঙ্গের জন্য একটি চমৎকার মাধ্যম হলো ব্রইস্ট সেলফ এক্সামিনেশন করা। ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন ঋতুবর্তী নারীরা নিয়মিত মাসিক শেষ হওয়ার পর অথবা মাসিক শেষ হওয়ার এক সপ্তার মধ্যে এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে পারেন। কারণ এসময় শরীর ও স্তন কিছুটা হালকা থাকে। শরীর ও স্তন হালকা থাকার পাশাপাশি এ সময় ব্যাথাও কম হয় তাই বেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন করার উপযুক্ত সময় এটি। এ পরীক্ষার শুরুতেই পরিষ্কার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যথেষ্ট পরিমাণ আলোতে শারীরিক প্রত্যেকটি অংশকে লক্ষ্য করতে হবে। পরবর্তীতে বুকের মাংসপেশিতে টান টান করে রাখতে হবে এক্ষেত্রে দুই হাত কোমরে চাপ দিয়ে রাখা উপযুক্ত একটি অবস্থান। পরবর্তী ধাপে স্তনবৃন্তকে হাল্কা করে চাপ দিতে হবে এবং লক্ষ্য করতে হবে কোন প্রকার আঠালো অথবা কোন রকম রস বের হয় কিনা। এর পাশাপাশি কিছু লক্ষণীয় বিষয় এর মধ্যে স্তনের আকৃতি পরিবর্তন, দুই স্তনের মধ্যে কোন ধরনের তারতম্য রয়েছে কিনা, দুই স্তন দেখতে একই রকম কিনা অথবা স্তনের ত্বকে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা এ সকল বিষয় নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। লক্ষ্য করুন স্তনবৃন্ত ভিতরের দিকে চলে গিয়েছে কিনা, স্তনবৃন্ত সংলগ্ন এলাকার ত্বকের অস্বাভাবিকতা আছে কিনা, অথবা কোন ধরনের দাগ রয়েছে কিনা, বৃন্ত থেকে নির্গত রস এর রং অথবা তরলের রং লক্ষ্য করুন। দুটি স্তনের মধ্যবর্তী অঞ্চল লক্ষ্য করুন দুটি স্তন একটি অপরটির থেকে কতটুকু সামঞ্জস্যতায় রয়েছে সে বিষয়গুলো নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
স্তন ক্যান্সার স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা ২ থেকে ৩ বছরে অন্তত একবার করে স্তনকে পরীক্ষা করানো। স্তন ক্যান্সারের থেকে মুক্তির জন্য স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং এর কোন বিকল্প নেই। যখনই চিকিৎসককে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হপবে তখনই তিনি এর পরীক্ষা পরামর্শ প্রদান করবেন ডাক্তার নিজেই। কত বছর বয়স থেকে স্তন স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাফি অথবা পরীক্ষা চালু করতে হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক বিতর্ক সে ক্ষেত্রে আলোচনা সাপেক্ষে ৪০ বছর পার হলে স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং করা যৌক্তিক বলে দাবি করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। আমাদের স্তন ক্যান্সারের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে এবং স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। যাতে করে এই মহামারী রোগ থেকে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি।