দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এয়ার কন্ডিশনার বা যাবে সংক্ষেপে বলা হয় এসি। বর্তমান সময়ের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী পণ্য এটি। কিন্তু একটু অসচেতনায় এই আরামদায়ক পণ্যটিই হয়ে উঠতে পারে জীবননাশী। এসি বিস্ফোরিত হয়ে প্রায়ই মৃত্যুর সংবাদ শোনা যায়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডায় এসি বিস্ফোরণ হতে সৃষ্ট আগুনে পুড়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটেছে বলে পত্রপত্রিকায় এসেছে। তাই এসি বিস্ফোরণের বিষয়ে সবারই সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বলেছেন, এসি দুর্ঘটনার পেছনে ৩/৪টি কারণ রয়েছে।
‘অনেকেই রুমের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহারই করেন না। যে কারণে এসিটি অনেকক্ষণ ধরে চলার প্রয়োজন পড়ে, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এসি। নিম্নমানের এসি কিনলে সেগুলোর ভেতরে ফ্যান, তার, বিদ্যুতের ব্যবস্থাগুলো ঠিক নাও থাকতে পারে। যে কারণে সেখানেও কারিগরি ত্রুটি দেখা যায়, যা অনেক সময় আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এসি দুর্ঘটনার আরেকটি বড়ো কারণ হলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। যে কারণে কারিগরি ত্রুটির কারণে এসিতে আগুনও ধরে যেতে পারে কিংবা এসির গ্যাসে আগুন লেগে সেটি দ্রুত ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
অনেক সময় দেখা যায় উইন্ডো এসির সামনে জানালা কিংবা দরজার পর্দা চলে এলে বাতাস চলাচলে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সেটিও এসিকে গরম করে তুলতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
এসি বিস্ফোরণের কারণ ও তা থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ওয়ালটন এসি গবেষণা এবং উন্নয়ন (আরএন্ডডি) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সন্দীপ বিশ্বাস। পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো।
যেসব কারণে এসি বিস্ফোরণ ঘটতে পারে :
# এসির কনডেনসার এ ময়লা থাকলে কম্প্র্রেসর-এ হাই টেম্পারেচার ও হাই প্রেশার তৈরি হওয়ার কারণে।
# সঠিক স্পেকের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার না করার কারণে।
# এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ হলে কিংবা হাই প্রেশার তৈরি হয়ে কম্প্র্রেসর ব্লাস্ট হতে পারে।
# কম্প্র্রেসর-এর লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট (refrigerant) চার্জ করলে ও সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করলে হাই প্রেশার তৈরি হয়েও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
# কম্প্রেসর-এ প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট না থাকলে ভেতরের তাপমাত্রা লিমিটের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণে।
# সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম না করার কারণে।
# সঠিক রেটিং এর সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার না করার কারণে।
এসি বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার কয়েকটি উপায় জেনে নিন :
# এসির কনডেনসার নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
# উন্নত মানের এবং সঠিক স্পেকের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার করতে হবে।
# কম্প্র্রেসর-এ হাই টেম্পারেচার ও হাই প্রেশার তৈরি হচ্ছে কি না সেটি পরীক্ষা করতে হবে।
# এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে।
# কম্প্র্রেসর-এ প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট রয়েছে কি না তা অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করানো।
# কম্প্র্রেসর-এর লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করা এবা সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করা।
# বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি, কম্প্র্রেসর ও রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা।
# নিম্নমানের অখ্যাত বা নকল ব্র্যান্ডের এসি ও কম্প্র্রেসর কেনা ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
# সঠিক রেটিংয়ের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করতে হবে।
# সঠিক পদ্ধতিতে এসির ভ্যাকুয়াম করা।
# দীর্ঘদিন পর এসি চালু করার আগে একজন দক্ষ সার্ভিস এক্সপার্ট দিয়ে এসি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
# ঘরের বারান্দা বা খুব কাছে না রেখে ঘরের বাইরে এসি আউটডোর সেট করায় ভালো।