দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতি করোনার প্রধান লক্ষণগুলো অনেকেই বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে দেখেছেন। তারপরও আমাদের অনেক কিছুই জানার রয়েছে। যে বিষয়গুলো জানলে হয়তো আমরা আরও সতর্ক হতে পারবো।
করোনা ভাইরাসে যতো বেশি পরীক্ষা করা হবে ততো বেশি মঙ্গল। এখন তো পরীক্ষা করা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে, জেলা পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও করোনা পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তাই কোনো কঠিন উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করাতে হবে।
এমন নানা পরামর্শ দিলেন অভিনেতা ও চিকিৎসক এজাজুল হক এজাজ। ১৯৮৪ সালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হতে এমবিবিএস পাশ করেন। এরপর পিজি ( বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) হতে ডিএনএম (পোস্ট গ্রাজুয়েশন-ডিপ্লোমা ইন নিউক্লিয়ার মেডিসিন) করেছেন তিনি।
ইতিপূর্বে দেশের নানা জায়গায় চিকিৎসক হিসেবে চাকরিও করেছেন। সর্বশেষ এজাজুল ইসলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছেন। গত জানুয়ারি হতে তিনি অবসরে রয়েছেন।
অভিনেতা এজাজ বলেছেন, ‘আমাদের দেশের যা অবস্থা তাতে আমাদের সতর্ক না হয়ে কোনো উপায় নেই। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে কেনো যে পারি না, আসলে আমরা নিজের চোখে বিপদ না দেখলে সতর্ক হতে চাই না।
বর্তমানে দেশের যে অবস্থা এখন সতর্ক না হলে আমরা ভয়াবহ খারাপ অবস্থার দিকেই যাবো। আসলে আমরা পালিয়ে বাঁচতে চাইছি। আমরা ইতালি, ফ্রান্স হতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে বাঁচতে চাইছি, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা থেকে পালিয়ে গ্রামে গিয়ে বাঁচতে চাইছি।
এটি আসলে বাঁচা নয়, আপনি নিজেকে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে আপনার আশেপাশের মানুষরাও মৃত্যুর দিকে চলে আসছে আপনার কারণে। এটাকে আসলে বাঁচা বলে না, নিজেই নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। নিজের জায়গা থেকে বাঁচুন।’
বিটিভির জনপ্রিয় এই অভিনেতা বলেন, ‘যারা বিদেশ থেকে এসেছে শুধুমাত্র তাদের দোষ দিলেই হবে না। ওইসব দেশগুলোরও দোষ দিতে হবে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কেনো তারা ছাড়লো। দেশে এসে তারা যেভাবে ঘুরে বেড়ালো, তারা এর ভয়াবহতা মোটেও বোঝেনি।
কারণ হলো ইনকিবিউশন পিরিয়ড পার না হলে বোঝা সম্ভব না যে কার শরীরে ভাইরাস রয়েছে, আর কার শরীরে ভাইরাসটি নেই। এখন তো দেখতে পাচ্ছেন যে কী অবস্থা। যাই হোক, এখনও মানুষ পুরোপুরি সতর্ক হলে হয়তো আমরা ধকল সামলে উঠতে পারবো।’
সাধারণ রোগীদের পরামর্শ দিয়ে ডা. এজাজ আরও বলেন, করোনার প্রধান লক্ষণগুলো অনেকেই বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেখেছেন। এমন গলাব্যাথা, গলায় কিছু আটকে থাকা, জ্বরসহ এমন উপসর্গ সিরিয়াস পর্যায়ে দেখা দিলেই যেসব জায়গায় করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা হচ্ছে সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা যদি উপসর্গ দেখে মনে করে পরীক্ষা করা দরকার তাহলে তারা পরীক্ষা করবে। যতো বেশি পরীক্ষা হবে, ততোই বেশি মঙ্গল।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।