দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে প্রায় ৬ সপ্তাহের ম্যারাথন নির্বাচন শেষ হলো গতকাল শনিবার (১ জুন)। গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ৭ দফার ভোটের শেষ ধাপে গতকাল (শনিবার) ৮টি রাজ্যে লোকসভার ৫৭ আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
শেষ ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি এলাকায় বিচ্ছিন্ন সহিংসতা এবং ইভিএম মেশিন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন আগামী ৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করবে।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো দল কিংবা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায় তাহলে তাদের লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে অন্ততপক্ষে ২৭২টিতে জয় পেতে হয়। এবারের লোকসভা নির্বাচনে দু’টি বড় জোটের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়। এর একটি দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ও অপরটি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এনডিএ জোট টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অপরদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোটও নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের ব্যাপারে আশাপ্রকাশ করছে।
গককাল শনিবার (১ জুন) ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বরাবরের মতো দেশটির সংবাদমাধ্যমে বুথ ফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হতে শুরু করে। যদিও এইসব জরিপের ফলাফল অনেক সময় উল্টোও হতে দেখা যায়। ইতিপূর্বে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫৩ আসনে জয় পায় এনডিএ জোট।
সন্ধ্যার দিকে দেশটির অন্তত ৪টি গণমাধ্যমের বুথ ফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় যে, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট লোকসভার ৩৫০টিরও বেশি আসনে জয় পেতে চলেছে। যারমধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটি প্রথম বুথ ফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করে বলে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবারের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির ৪টি সংবাদমাধ্যম এবং সংস্থার বুথ ফেরত জরিপের ফলাফলে বলা হয়, ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট ৫৪৩ আসনের লোকসভার ৩৫০টিরও বেশি আসনে হয়তো জয় পেতে পারে। যেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২টি আসন দরকার।
ইন্ডিয়া নিউজ এবং ডি-ডায়নামিকসের বুথ ফেরত জরিপ বলছে যে, লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট ৩৭১ এবং ইনডিয়া জোট ১২৫ আসনে জয় পেতে পারে। এছাড়াও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট ১২৫ আসনে জয়ী হতে পারে।
দেশটির অপর সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক ভারত এবং ম্যাট্রিজের বুথ ফেরত জরিপের ফলাফলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫৩ হতে ৩৬৮ আসনে জয় পেতে পারে বলে জানানো হয়। এছাড়াও দেশটির বিরোধী দলগুলোর জোট ইনডিয়া ১১৮ হতে ১৩৩ আসনে জয়ী হতে পারে। অন্যান্য দলগুলো ৪৩ থেকে ৪৮ আসনে জয় পাবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক টিভি এবং পিএমএআরকিউয়ের বুথ ফেরত জরিপ বলছে যে, এনডিএ জোট ৩৫৯ আসনে ও ইনডিয়া জোট ১৫৪ আসনে জয় পেতে পারে। অন্যান্য দলগুলোর দখলে যেতে পারে ৩০টি আসন।
জান কি বাতের বুথ ফেরত জরিপের ফলে বলা হয়, এনডিএ জোট ৩৬২ হতে ৩৯২ আসন ও ইনডিয়া জোট ১৪১ হতে ১৬১ আসনে জয় পেতে যাচ্ছে বলে জানানো হয়।
এই ৪টি সংবাদমাধ্যমের বুথ ফেরত জরিপের ফল গড় হিসেব করে এনডিটিভি বলছে যে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৬৫ আসন, ইনডিয়া জোট ১৪২ আসন ও অন্যান্যরা ৩৬ আসনে জয়ী হতে পারে এবারের নির্বাচনে।
যদি শেষ পর্যন্ত ফলাফল তাই হয় তাহলে, ৭৩ বছর বয়সী মোদির সম্ভাব্য বিজয় তাকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাবশালী নেতা জওহরলাল নেহরুর পর দেশটির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতার মসনদে বসাবেন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org
Bengali 
English