দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বছর উনিশ বয়সের এক ছেলের ডান কাঁধের পেশিতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। তার কাঁধের পেশি রীতিমতো শক্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে ‘ফ্রোজ়েন শোল্ডার’-এর সমস্যা বলে ভেবেছিলেন চিকিৎসকরা। তবে পরে ধরা পড়ে অন্য এক রোগ।

এই রোগের উপসর্গ খুবই বিরল। তবে এমনটিও ঘটে। ডান কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা, হাত নাড়াচাড়া করতে সমস্যা মানেই যে সেটি ‘ফ্রোজ়েন শোল্ডার’ নাও হতে পারে। নেপথ্যে থাকতে পারে অন্য কোনো কারণও। বাঁ হাত কিংবা বাঁ কাঁধে ব্যথা যেমন হৃদরোগের উপসর্গ হতে পারে অনেক সময়, তেমনি ডান কাঁধের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা কিংবা পেশিতে টান ধরা মানেই তা ‘গলস্টোন’ কিংবা পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার পূর্বলক্ষণও হতে পারে।
অবাক লাগলেও এটিই সত্যি। ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ এই নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করছে। গবেষকরা জানিয়েছেন যে, বছর উনিশ বয়সের এক ছেলের ডান কাঁধের পেশিতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়েছিলো। কাঁধের পেশি রীতিমতো শক্ত হয়ে গিয়েছিল তার। প্রথমে ‘ফ্রোজ়েন শোল্ডার’-এর সমস্যা বলে ভেবেছিলেন চিকিৎসকরা। তবে পরে দেখা যায়, ছেলেটি ঘন ঘন জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। সেইসঙ্গে বমি- ডায়রিয়া। পরে লিভারের অসুখও ধরা পড়ে ছেলেটির। শেষ পর্যন্ত ছেলেটির অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়লে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় যে, তার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে ও ছেলেটি ‘অ্যাড্রেনোকর্টিকাল কার্সিনোমা’ নামক এক ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত। রোগ শনাক্ত হওয়ার মাস চারেকের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে ছেলেটির।
গবেষকরা জানিয়েছেন যে, পিত্তথলিতে পাথর জমার মূল লক্ষণই হলো, পেটের ডান দিক থেকে ব্যথা শুরু হয়ে ডান কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছানো। পিত্তরসে অত্যাধিক পরিমাণে কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন জমা হতে থাকলে, সেটি জমাট বেঁধে ছোট ছোট পাথরের আকার নেয়। এই পাথরের সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে তাহলে পেটব্যথার সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে অনেকের। সেইসঙ্গে ঘন ঘন বমিও হতে থাকে। ডান দিকের পাঁজরের নীচে তখন ব্যথা হয়। সেইসঙ্গে প্রদাহ শুরু হয় পেশি এবং অস্থিসন্ধিতে। তাই যদি ডান কাঁধে অনবরত ব্যথা হতেই থাকে, বা কাঁধের পেশিতে টান ধরতে থাকে, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাধারণত দেখা যায়, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, হরমোনের গোলমাল, কোলেস্টেরলের বাড়বাড়ন্ত, দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকাও পিত্তথলিতে পাথর জমার কারণ হতে পারে। ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর তথ্য বলছে যে, পুরুষদের থেকে মহিলাদের এই রোগের ঝুঁকি অনেকটা বেশি। মহিলারা বাড়তি ওজন কমাতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ না নিয়ে বিভিন্ন রকম ডায়েট করেন। শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হলেও এই রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। আবার ঋতুবন্ধের পরে হরমোনের ওঠানামার কারণেও এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও ডায়াবেটিস থাকলে, ঘন ঘন কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেলে তার থেকেও পিত্তথলিতে পাথর জমার আশঙ্কা থাকে। পিত্তথলিতে পাথর জমলে তা থেকে জন্ডিসের মতো রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই সব ক্ষেত্রেই সাবধান থাকাটা জরুরি।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। কাঁধে মানেই যে পিত্তথলিতে পাথর জমছে তা নাও হতে পারে। তাই অস্থিসন্ধি বা পেশিতে ব্যথা হলে, চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটা জরুরি। নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে, যে কোনও রোগের ঝুঁকিই কমে আসবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org