দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোভিডকালে মাল্টিভিটামিন খাওয়ার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেড়েছিল। সেই সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরাও কিছু ভিটামিন প্রেস্ক্রাইব করতেন। কোভিডের বাড়বাড়ন্ত এখন নেই। তবে মানুষের মধ্যে মাল্টিভিটামিন খাওয়ার প্রবণতা এখনও রয়েছে। অনেকেরই ধারণা এই ধরনের সাপ্লিমেন্ট কিংবা ট্যাবলেট খেলে সুস্থ থাকা যাবে। এই ধারণা আদতে শরীরের জন্য ঠিক নাকি ভুল?

সংবাদ মাধ্যমকে জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, অকারণে ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাল্টিভিটামিন খাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। ডাঃ বিশ্বাস বলেছেন, ‘কখনও গুরুতর অসুস্থ না হলে, শরীরে ব্যাপকভাবে পুষ্টির ঘাটতি না হলে এই ধরনের ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। রোগী যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে সে কারণেই আমরা ভিটামিনের ওষুধ সাজেস্ট করে থাকি।’
বাজারে অনেক ধরনের ভিটামিনের ওষুধ পাওয়া যায়। কিছু ওষুধ চিকিৎসকের প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হয় না। আবার কিছু সাপ্লিমেন্টের নাম ওষুধের দোকানে গিয়ে বললেই কিনতে পাওয়া যায়, প্রেস্ক্রিপশনের প্রয়োজন পড়ে না। এগুলো ‘ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ‘ এবং ‘নিউট্রাসিউটিক্যালস’। ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বিক্রিও হয় বাজারে।
জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসক রুদ্রজিৎ পাল বলেন, ‘অনেক ধরনেরই মাল্টিভিটামিন রয়েছে, যেগুলো খাওয়ার কোনও দরকারই নেই। খেলে শরীরে তার কোনও উপকারিতাও পাওয়া যায় না। এছাড়াও চিকিৎসক হিসেবে আমরাও জানি না, এতে আসলে কী-কী উপাদান থাকে। সেদিক দিয়ে বিচার করতে হলে এগুলো শরীরের জন্য বরং ক্ষতিকর।’
দেহে অস্বাভাবিকভাবে ভিটামিনের মাত্রা বেড়ে গেলে ‘হাইপারভিটামিনোসিস’ নামে একটি জটিল অবস্থা তৈরি হতে পারে। তখন বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা হওয়া, ত্বকের সমস্যা, ক্লান্তি, জয়েন্টে ব্যথার মতো নানা উপসর্গও দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই কিডনি, লিভারের বারোটাও বাজায় এই ধরনের মাল্টিভিটামিন।
ডাঃ বিশ্বাস আরও বলেন, ‘আপনি কোন ধরনের ভিটামিন খাচ্ছেন, কতোদিন ধরে খাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করছে শরীরের উপর এর কী প্রভাব পড়বে। যেমন অত্যাধিক পরিমাণে ভিটামিন ডি খেলে হাড়ের উপর চাপও পড়ে।’
রোগীর শরীরে কোন ভিটামিন কতোটা পরিমাণে প্রয়োজন তার উপর ভিত্তি করেই ভিটামিন এবং মিনারেলের ওষুধ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তারা যে ভিটামিন এবং মিনারেলের ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করেন, সেগুলো রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝেই করেন। ডা: বিশ্বাসের বক্তব্য হলো, ‘আমরা প্রতিদিন যে ভাত-রুটি-তরকারি খাই, তাতে করেই দেহে পুষ্টির ঘাটতি মিটে যায়।’
বাজারে যখন যে ধরনের শাকসব্জি, ফল পাওয়া যায়, সেগুলো খেলেই দেহে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হতে পারে। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ রাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দানাশস্য, শাকসব্জি, ফল, বাদাম, মাছ ও দুধের মতো খাবার থেকেও পুষ্টি পাওয়া যায়। পৃথক করে মাল্টিভিটামিন খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাজারে যে সব্জি এবং ফল পাওয়া যায় সেগুলোই খেতে পারে। তবে অবশ্যই সেগুলো তাজা হওয়া চাই- ফ্রোজেন নয়।’ যেমন- রুটি, ভাত, ডালিয়া, ওটস, চিঁড়া এই ধরনের দানাশস্য জাতীয় খাবারে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়। লেবুজাতীয় ফল খেলে দেহে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মিটে যাবে। আর আমলকি, পেয়ারা থেকেও ভিটামিন সি পাওয়া যেতে পারে। বাদাম, দুধ, দইয়ের মতো খাবার থেকেও যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যেতেই পারে। মাছ খেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যাবে বিশেষ করে সমুদ্রের মাছ। ডাল থেকেও ভিটামিন ও মিনারেল পেতে পারেন। এগুলো খেলে আর পৃথক করে আয়রণ ট্যাবলেট কিংবা মাল্টিভিটামিন খেতে হবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদ। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org