দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইসরায়েলের অবরোধ এবং অব্যাহত বিমান হামলার কারণে বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি শিশুরা এক মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে। তাদের একবেলার খাবারও জুটছে না বলে জানিয়েছেন সেখানে কর্মরত ১২টি আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার নেতারা।

গত বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছেন, ১৮ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ও গত মাসে আরোপিত সম্পূর্ণ অবরোধের কারণে গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।
এদিকে গত দুই দিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৯২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল (শনিবার) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় কমপক্ষে ৫১ হাজার ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আর আহত হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।
ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি এবং স্থাপনার ধ্বংসস্তপে এখনও ১০ হাজারের বেশি মরদেহ পড়ে রয়েছে। ভারি উদ্ধার সরঞ্জামের অভাবে ও রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং অব্যাহত হামলার কারণে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে না পারায় এইসব দেহাবশেষ উদ্ধার করাও সম্ভব হচ্ছে না।
১২টি আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভয়াবহ এবং নির্বিচার বোমাবর্ষণের কারণে গাজায় চলাচল অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় পড়েছে। এই অবস্থায় সেখানে কাজ করা ৪৩টি আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় সহায়তা সংস্থার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই তাদের কার্যক্রম স্থগিত কিংবা সীমিত করেছে।
অক্সফামের নীতিনির্ধারণী প্রধান বুশরা খালিল বলেছেন, গাজার শিশুরা দিনে একবেলারও কম খাবার পাচ্ছে। তাদের জন্য এখন খাবার জোগাড় করাও যেনো এক কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু টিনজাত খাবার খেয়ে বেঁচে রয়েছে, তাদের মধ্যে অপুষ্টি ও ক্ষুধার্ত অঞ্চলের সংখ্যা বাড়ছেই।
আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদআউট বর্ডারসের গাজা অঞ্চলের জরুরি সমন্বয়কারী আমান্ডে বাজরোল বলেছেন, সহায়তাকর্মীরা চোখের সামনেই মানুষকে, যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু- কষ্ট পেয়ে মারা যেতে দেখছেন অথচ তাদের হাতে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী নেই। প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী ফুরিয়ে আসায় গাজায় সহায়তা কার্যক্রম চালানো এক প্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন যে, এটি মানবিক বিপর্যয় নয়- এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, একটি জাতির বেঁচে থাকার সক্ষমতার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত, যা অবাধে ও শাস্তিহীনভাবে চালানো হচ্ছে।
শুক্রবার গাজা শহর হতে আলজাজিরার হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, শিশুখাদ্য এবং দুগ্ধজাত পণ্যের অভাবে শিশু ও নবজাতকরা চরমভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বহু শিশুকে পুষ্টিহীনতায় ভুগতে দেখেছি। ওখানকার পরিবারগুলো তাদের ন্যূনতম চাহিদাও মেটাতে পারছে না। বাজার এবং ফার্মেসিতে শিশুখাদ্য একেবারেই নেই বললেই চলে। গাজায় সব জরুরি পণ্যের সংকটও চলছে।’
দেইর আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে আলজাজিরাকে ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, অপুষ্টিজনিত কারণে তারা তাদের সন্তানদের হারাচ্ছেন।
নিজের সন্তান হারানো ফাদি আহমেদ বলেছেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, ছেলের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটেছিল, যে কারণে তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে গিয়েছিলো। তিনি বলেন, দুর্বলতা এবং চরম অপুষ্টি তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। হাসপাতালে এক সপ্তাহ থাকার পর সে মারা যায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গাজা উপত্যকায় বর্তমানে ৬০ হাজারেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এদিকে ১১ জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় ৪৫ দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। মিসর এবং কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে এই প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে যে, ওই প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে সংগঠনটি। যতো দ্রুত সম্ভব এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানানো হবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যেতে হামাস এখনও তাদের মূল দাবিতে অটল রয়েছেন। হামাসের দাবি হলো, গাজায় যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হতে হবে ও সেখান থেকে ইসরায়েলের সব সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
ইতিপূর্বে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন যে, ইসরায়েলকে শত্রুতা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে, হামাসের এই দাবিটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে পূরণ হয়নি। এ ছাড়াও নতুন প্রস্তাবে ইসরায়েল এই প্রথমবারের মতো পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বানও জানিয়েছে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org