দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঘুম মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। সুস্থ শরীর এবং সতেজ মনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

তবে কাজের চাপ, মানসিক অস্থিরতা, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার কিংবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকেরই ঘুম কম হয়। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই ঘুম কম হলে কিছু করণীয় জানা জরুরি।
# ঘুমের জন্য একটি সঠিক রুটিন তৈরি করা জরুরি। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একই সময়ে জাগা শরীরের জৈবিক ঘড়িকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এতে ঘুম স্বাভাবিকভাবে আসতে শুরু করে।
# ঘুমানোর আগে পরিবেশকে আরামদায়ক করে তোলা প্রয়োজন। অন্ধকার, নীরব এবং ঠাণ্ডা পরিবেশ ঘুমাতে সহায়ক। অতিরিক্ত আলো, শব্দ বা গরম পরিবেশ ঘুমে বাধা সৃষ্টি করে। তাই শোবার ঘরকে আরামদায়ক রাখতে হবে।
# প্রযুক্তির ব্যবহার কমানো জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন বা কম্পিউটার ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে যায় এবং ঘুম দেরিতে আসে। তাই ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে এসব ডিভাইস থেকে দূরে থাকা উচিত।
# সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা দরকার। ঘুমানোর আগে ভারী বা ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয়, যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। আবার চা, কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় রাতে এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এগুলো স্নায়ুতন্ত্রকে জাগ্রত রাখে। অন্যদিকে দুধ বা হালকা খাবার ঘুম আনতে সাহায্য করে।
# নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন ঘুম উন্নত করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম শরীরকে ক্লান্ত করে এবং রাতে ঘুম আসতে সহায়তা করে। তবে শোবার ঠিক আগে ব্যায়াম করা উচিত নয়।
# মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বা হতাশা ঘুম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কিংবা যোগব্যায়াম মানসিক শান্তি এনে ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে।
# যদি দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা চলতে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অন্যান্য শারীরিক জটিলতা থেকেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে, যা চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য।
তাই বলা যায়, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, মনোযোগ নষ্ট হয় এবং নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা আনা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং মানসিক চাপ কমানো অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যকর ঘুম সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org