দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঢেড়ষ আমাদের দেশের খুব পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি সবজি। এটি শুধু স্বাদেই নয়, গুণেও ভরপুর। নিয়মিত ঢেড়ষ খেলে শরীরের নানা উপকার পাওয়া যায়।

ঢেড়ষে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে, বি৬, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। নিচে ঢেড়ষের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো—
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ঢেড়ষ অত্যন্ত কার্যকর। এতে থাকা দ্রবণীয় আঁশ (soluble fiber) শরীরে গ্লুকোজ শোষণকে ধীর করে দেয়, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ঢেড়ষ খেলে রক্তে গ্লুকোজের ওঠানামা কমে যায়।
ঢেড়ষে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে। এর ফলে ত্বক থাকে সতেজ এবং তরুণ, পাশাপাশি ক্যান্সারসহ নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ঢেড়ষে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে।
ঢেড়ষে থাকা ভিটামিন সি ও কে হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঢেড়ষে থাকা ফোলেট গর্ভবতী নারীদের জন্য খুব উপকারী। এটি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে এবং জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও ঢেড়ষ হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। এর আঁশ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, ফলে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
তাই বলা যায়, ঢেড়ষ একটি পুষ্টিকর, ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি। নিয়মিত পরিমাণমতো ঢেড়ষ খেলে শরীর সুস্থ, ত্বক উজ্জ্বল এবং হজম ভালো থাকে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ঢেড়ষ রাখা একটি বুদ্ধিমানের কাজ।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org