দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বনের সিংহের গর্জন রাতের নীরবতা যেনো ভেঙে দেয়। এই গর্জনে আমরা ভয় পাই, তবে বুঝতে পারি না। একটি নতুন গবেষণায় প্রতিটি গর্জনের তথ্যই জানার কৌশল বের করেছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষকরা সিংহের একটি গর্জনের সময় চার ধরনের শব্দ শনাক্ত করেন। এই কাজ করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমেই। বিভিন্ন সিংহের গর্জন একটি ডেটাবেসেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দেখা যায় যে, একটি সিংহ প্রথমে নরম গর্জন দিয়ে শুরু করে। এরপর পুরো গলা দিয়ে শক্তিশালী গর্জনও দেয়। তারপর একটি সংক্ষিপ্ত মধ্যবর্তী গর্জনে স্থানান্তরিত হয়। সব শেষে ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ দিয়েও শেষ করে। পূর্বে মনে করা হতো সিংহ একবারই গর্জন করে।
নতুন গবেষণায় ভিন্ন ধরনের গর্জনের তথ্যও মিলেছে, যার উত্থান বেশ সংক্ষিপ্ত, পতন দ্রুত এবং সর্বোচ্চ কম্পাঙ্ক নিম্ন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের বিজ্ঞানী জোনাথন গ্রোকট বলেছেন, ‘সিংহের এই গর্জন আকর্ষণীয়। একেকটি গর্জন মূলত স্বতন্ত্র স্বাক্ষর, যা সিংহের জনসংখ্যার আকার অনুমান করতে এবং নিরীক্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতেই পারে। এআই ব্যবহার করে গর্জন শনাক্তকরণে আমাদের নতুন পদ্ধতিও আরও নির্ভুল।’
বয়স, সামাজিক অবস্থান ও দৈনিক ছন্দের সঙ্গে গর্জনের আচরণ পরিবর্তিত হয়। এআইয়ের মাধ্যমে এই পরিবর্তনও বোঝা যায়। আবার কম বয়সী প্রাণীরা কম ডাকে। দলের বাইরের পুরুষরা গর্জন এড়িয়ে চলে, কারণ উচ্চ কণ্ঠস্বরই প্রতিদ্বন্দ্বীদের আকর্ষণ করতে পারে। ভোর হওয়ার পূর্বে গর্জন করে চূড়ায় পৌঁছায় সিংহ, তখন শব্দ অনেক দূর পর্যন্তও ভ্রমণ করতে পারে। পানির উত্স আরও বেশি কণ্ঠস্বরজনিত কার্যকলাপেও পরিবর্তন দেখা যায়।
নারী সিংহ কিংবা সিংহীরাও ডাকে। যদিও নতুন মায়েরা শাবকদের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ এড়াতে প্রায় সময় শান্ত থাকে। গর্জনের মাধ্যমে নিজের আচরণ প্রতিফলিতও করে। এইসব তথ্য এআই দিয়ে জানা যায়। এআই প্রতিটি শব্দের ধরণের মধ্যে স্পষ্টই পার্থক্য দেখায়। পুরো গলার গর্জন বেশ দীর্ঘতর হয় ও উচ্চতর কম্পাঙ্কেও পৌঁছায়। মধ্যবর্তী গর্জন দ্রুত ওঠে এবং দ্রুত নামে।
জিম্বাবুয়ে কলার পরানো সিংহদের রেকর্ডিংয়ে এআই সিস্টেমটি ব্যবহার করা হয়। এমন এআই-ভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস স্বতন্ত্র প্রাণীদের শনাক্তকরণও উন্নত করছে। গবেষণাটি ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন জার্নালে প্রকাশিত হয়। তথ্যসূত্র: আর্থ।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org