দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভোরের আলো ফুটার আগেই, শীতের রাতের শেষ প্রহরে নিস্তব্ধ এক সময়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নদীপারে অবস্থিত নবদ্বীপ শহরটায় সবাই তখন ঘুমিয়ে ছিল। ঠিক সেই সময়টাতে এক নবজাতককে পড়ে থাকতে দেখা গেল রেলওয়ে কর্মীদের কলোনির বাথরুমের বাইরের ঠাণ্ডা মাটিতে। তাকে ঘিরে রয়েছে কয়েকটি কুকুর।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, গত সোমবার ভোরবেলা নবদ্বীপের একটি বাড়ির টয়লেটের বাইরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক নবজাতক শিশুকে পাহারা দিয়ে রক্ষা করেছে একদল বেওয়ারিশ কুকুর।
কুকুরগুলো ওই সময় একেবারে নিখুঁত একটি বৃত্ত তৈরি করে নবজাতকটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। ঘেউ ঘেউ নয়, ছোটাছুটি নয়, শুধু নীরব এক প্রহরা। তারপর স্থানীয় এক মহিলা ভোরে শিশুটিকে উদ্ধার করার পর কুকুরগুলো ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা শুক্লা মণ্ডল সবার পূর্বে কুকুরবেষ্টিত শিশুটিকে দেখেন। তিনি বলেন যে, ‘ঘুম ভেঙে আমরা যা দেখেছিলাম, তাতে এখনও যেনো শরীর শিউরে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কুকুরগুলো কোনো রকম রাগী ছিল না। তারা যেনো একধরনের সতর্কতায় দাঁড়িয়ে ছিল। যেনো বুঝতে পারছিলো এই বাচ্চাটা বাঁচার জন্য লড়ছে।’
আরেক বাসিন্দা সুভাষ পাল ভোরের একটু আগে শোনা ক্ষীণ কান্নার কথাও স্মরণ করলেন।
তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আশপাশের কোনো বাড়িতে অসুস্থ বাচ্চা রয়েছে। কখনও কল্পনা করিনি বাইরে মাটিতে এক নবজাতক পড়ে রয়েছে, তার চারপাশে কুকুররা পাহারা দিচ্ছে। তারা ঠিক প্রহরীর মতোই আচরণ করছিলো।’
শুক্লা জানিয়েছেন, অবশেষে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলে কুকুরগুলো তখন নীরবে তাদের পাহারার বৃত্ত শিথিল করে। তিনি নিজের ওড়না দিয়ে শিশুটিকে জড়িয়ে ধরেন ও প্রতিবেশীদের ডাকেন। তড়িঘড়ি করে শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় মহেশগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে সেখান থেকে শিশুটিকে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরে চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির শরীরে কোনো রকম আঘাত নেই। মাথার রক্ত জন্মদাগ থেকেই হওয়া সম্ভব ও সবকিছু দেখে মনে হয়েছে, জন্মের পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কলোনিরই কেও রাতের আঁধারে শিশুটিকে সেখানে রেখে গেছেন।
নবদ্বীপ থানার পুলিশ এবং চাইল্ড হেল্প কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে ও শিশুটির দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবু প্রশাসনিক তৎপরতার আড়ালে শহরের মানুষের চোখে লেগে রয়েছে ওই রাতের দৃশ্য। প্রশিক্ষণহীন, অবহেলিত ওই কুকুরগুলো অদ্ভুত এক মানবিকতা দেখিয়েছে।
স্থানীয় এক রেলকর্মী বলেন, ‘এরা সেই কুকুর, যাদের নিয়ে আমরা সব সময় অভিযোগ করি। তবে তারা সেইসব মানুষের চেয়ে বেশি মানবতা দেখিয়েছে, যে মানুষ এই শিশুটিকে ফেলে রেখে গেছে।’
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org