ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সমগ্রির দাম সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ২ জুলাই এ নির্দেশনাগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসে।
নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় ৩০টি পণ্য মজুদ, আমদানি ও সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়। চিঠিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম নিয়েও সুপারিশ রয়েছে। জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের বাজারে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঠানোরও নির্দেশনা জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পণ্য বিপণনের সব পর্যায়ে কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট-১৯৫৬, অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আদেশ-১৯৮১, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুসরণের তাগিদ দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়, আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিবিড় তদারকি করতে হবে। এজন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকসহ ভোগ্যপণ্য সংক্রান্ত বিধান যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের তাগিদ রয়েছে। রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর আওতায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসককে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা আছে। বলা হয়, ‘কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী রমজান মাসে ক্রমবর্ধমান চাহিদার সুযোগ নিয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় নানা ধরনের অসাধু কারসাজি করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য বিনষ্টের মাধ্যমে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে ক্রেতার দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলে। এসব দুষ্টচক্র সরকার কর্তৃক গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপকে অকার্যকর করার পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
ওই পরিপত্রে আরও বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের প্রত্যেক পরিবেশক বা পাইকার পণ্য সংগ্রহের সময় পাকা রসিদ, ক্রয় ও বিক্রয় রসিদ সংগ্রহ এবং খুচরা ব্যবসায়ীদেরও এসব পণ্য বিক্রির বিপরীতে পাকা রসিদ প্রদান বাধ্যতামূলক। এছড়া সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব সংরক্ষণ করার বিষয়ে বলা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সব খুচরা বিক্রেতাকে বিক্রীতব্য পণ্যের খুচরা মূল্য প্রদর্শন করতে হবে। খুচরা পর্যায়ে পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকলে তার বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা যাবে না। খুচরা বিক্রেতাদেরও পাকা রসিদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে হবে। পণ্য পরিমাপে উৎপাদক, আমদানিকারক, পরিশোধক, পাইকার, পরিবেশক কোন পর্যায়েই মণ, সের ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। মেট্রিক পদ্ধতির ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং তরল ও গ্যাসীয় পণ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে একমাত্র লিটার একক এবং অন্য ক্ষেত্রে কেজি বা গ্রাম একক ব্যবহার করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সব পরিমাণ পণ্য মোড়কজাত করে বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। অত্যাবশকীয় পণ্য বিপণনে আইন ও আদেশের লংঘন হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে একজন ব্যবসায়ীর মন্তব্য চাওয়া হলে তিনি বলেন, আইন করা হয় কিন্তু তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না। যে কারণে আমাদের দেশে অব্যবস্থা থেকেই যায়। ওই ব্যবসায়ী মনে করেন রেডিও-টিভিসহ প্রচার মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আকারে এসব আইন না মানলে কি হতে পারে তা প্রচার করা উচিত। জনগণকে আইননের প্রতি শ্রদ্ধাশিল না হলে আইন করে কোন লাভ হবে না। রমজান মাস মুসলিম ধর্মের একটি বিশেষ মাস। এ মাসে সকলকেই ধর্মের প্রতিপালন বিষয়গুলোকে মেনে চললে এতো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ ইসলাম ধর্ম কাওকেই অতি মুনাফা করতে বলেনি।