দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফরমালিন নিয়ে সারাদেশের মানুষ চিন্তিত। সরকারও এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে। ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে এর উৎসে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এবার ভিন্ন নামে ফরমালিন আমদানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি জব্দকৃত ক্যামিকেল পরীক্ষা করে এমন ঘটনা ধরা পড়ে।
ফরমালিনকে যেহেতু সরকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে তাই বিভিন্ন নামে হাজার হাজার লিটার ফরমালিন আমদানি শুরু করেছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। বিভিন্ন ক্যামিকেলের নাম করে আনা এইসব ফরমালিন ফল, মাছ, দুধসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহার হচ্ছে। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড ও শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে সম্প্রতি জব্দ করা হয় ১৪ ধরনের ক্যামিকেল। পরবর্তীতে এসব জব্দকৃত ক্যামিকেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার পর দেখা যায়, ১৪টির মধ্যে ১৩টিই আসলে ফরমালিন। গতকাল রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ওই পরীক্ষার রিপোর্ট রসায়ন বিভাগে পাঠিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিলুফার নাহার জব্দকৃত ফরমালিন যে প্রক্রিয়ায় ধংস করা হচ্ছে তা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক বলে মন্তব্য করেছেন সংবাদ মাধ্যমকে । তিনি বলেছেন, এভাবে ফরমালিন ধ্বংস করলে পরিবেশ বিপর্যয়ে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) গাইড লাইন তথ্য অনুযায়ী পারমাণবিকের মতোই নিরাপদ পদ্ধতিতে ফরমালিন ধ্বংস করতে হয়। ফরমালিন ড্রেনে বা যত্রতত্রভাবে ফেললে, কিংবা গর্ত করে মাটির নিচে ফেললেও তা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে। ড্রেনে যত্রতত্র ফরমালিন ফেলে দিলে কিংবা গর্ত করে মাটির নিচে ফেললে বৃষ্টির পানির মাধ্যমে তা খাল, বিল, নদী- নালায় ওই ফরমালিন চলে যেতে পারে। আবার ফরমালিন বাতাসেও উড়ে যায়। বাতাসে উড়ে যাওয়া ফরমালিন শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে কিংবা খাদ্য নালীর মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। মাত্রার অনেক বেশি পরিমাণ এবং এটা সরাসরি মানবদেহে প্রবেশ করে। ফল-মূল, মাছ, দুধ, শাকসবজিসহ খাদ্য দ্রব্যের মাধ্যমে যে পরিমাণ ফরমালিন মানবদেহে যায় তা সেই তুলনায় নাকি অনেক কম।
রিপোর্টে বলা হয়, অল্প পরিমাণের ফরমালিনও মানবদেহে ক্যান্সার, কিডনি-লিভারের নানা ব্যাধীসহ মরণব্যাধী ডেকে আনতে পারে। অন্যদিকে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্ক ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যেতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে উড়ে যাওয়া মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন শ্বাস-প্রশ্বাস এবং খাদ্য নালীর মাধ্যমে সরাসরি দেহের যেসব অংশ দিয়ে প্রবেশ করবে সেসব অংশ দ্রুত বিকল হয়ে পড়তে পারে। আবার কিডনি, ক্যান্সার এবং লিভারসহ মরণব্যাধী দ্রুত সময়ের মধ্যে তা প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ্ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ বিষয়ে সরকার যেমন আইনশৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে কঠোর অবস্থানে গিয়েছে, তেমনি ফরমালিন আমদানির ক্ষেত্রেও আরও কঠোর ও সজাগ হতে হবে। তাছাড়া রেডিও-টিভিতে ব্যাপকভাবে এর অপকারিতা সম্পর্কে প্রচার-প্রপাডাণ্ডা চালাতে হবে। কারণ ফরমালিন ব্যবহার করেন আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ। যারা এর বিপদজ্জনক দিক সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যদি তাদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা যায় তাহলে এর ব্যবহার অনেক কমে আসবে।