দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সুন্দরবন। ট্যাংকার ডুবে পশুর নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
হঠাৎ করেই ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর সুন্দরবনের শেলা নদী হতে পশুর নদী পর্যন্ত তেল ছড়িয়ে পড়ায় এক মহা প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বিশ্বের খ্যাতনামা এই সুন্দরবনের। সুন্দরবনের ৩৪ হাজার হেক্টর এলাকায় ইতেমধ্যে তেল ছড়িয়ে পড়েছে বলে বন কর্মকর্তারা বলেছেন। এ কারণে যে এই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবনের জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনতে পারে, শুরুতেই তার আশঙ্কা করেছিলেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
সুন্দরবন বিভাগের খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক কার্ত্তিক চন্দ্র সরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘যতদূর ছোখ যায়, শুধু তেল ভাসতে দেখা যাচ্ছে’। শেলা নদীর মৃগমারী, আন্ধারমানিক, হরিণটানা, তাম্বুলবুনিয়া, শুয়ারমারা, জিউধরা, নন্দবালা, ধানসাগর, হারবাড়িয়া, চাঁদপাই স্টেশন কার্যালয়, মরাপশুর, জংড়া, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র, ঢাংমারী, ঘাঘড়ামারী এবং লাউডোব এলাকায় তেল ভাসছে বলে জানান ও্ই বন কর্মকর্তা।
বন কর্মকর্তা আরও জানান, ‘সুন্দরবনের ওই সব এলাকায় সুন্দরী গাছ বেশি রয়েছে। শেলা নদী সংলগ্ন বনের সুন্দরী, কেওড়া, বাইনসহ গুল্ম জাতীয় গাছের পাতাতেও তেলের আবরণ লেগে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও জোয়ারের পানি বনভূমিতে উতরে উঠে বনের গাছের শ্বাসমূলে লেগে রয়েছে। শেলা নদীর চরে বিভিন্ন স্থানে তেল লেগে মাটির ওপর কালচে আস্তরণ পড়েছে।’
নিজেদের অভয়াশ্রম হিসেবে খ্যাত শেলা নদীর জয়মনি এলাকায় একটু পর পর ডলফিন লাফিয়ে উঠতে দেখা যেতো। কিন্তু তেল ছড়িয়ে পড়ার পর গত মঙ্গলবার বিকাল আর আর কোনো ডলফিনকে ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। জেলেরা বলছেন, ‘এই নদীতে তেল ভাসার পর হতেই ডলফিনের কোনো লাফালাফি নেই। তেলের কারণে হয়তো মরে গেছে অথবা দূরে কোথাও সরে গেছে। তবে আরও কয়েকদিন গেলে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে।’
শুধু তাই নয়, সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক জেলে পরিবারের কেওই মঙ্গলবারের পর নদীতে মাছ ধরতে নামেননি। ওই এলাকার জেলেরা বলছেন, ‘তেলের কারণে আমরা পানিতে নামতেই পারছি না। নদীতে নামলেই গায়ে এবং জালে তেল জড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাছ ধরা এখন পুরোপুরি বন্ধ।’
তেল ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, ‘এই তেলের কারণে সুন্দরবনের গাছপালা আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যেতে পারে। সুন্দরবনের নদী-খালে অন্তত তিনশ’ প্রজাতির মাছের বিচরণ রয়েছে। ছোট প্রজাতির কিছু মাছ ইতিমধ্যেই মরতে শুরু করেছে। এসবমধ্যে মাছের মধ্যে রয়েছে নদীর পাঙ্গাস ও পারশে মাছ।’
এদিকে সরকারিভাবে তেল নি:স্বরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তেলের কারণে যাতে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে, গ্রামবাসী তেল অপসারণে এগিয়ে এসেছে।