দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক॥ প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত একটি বহুল আলোচিত রোগ। করোনা ভাইরাসে সচেতনতা ও করণীয় জেনে নিন।
এই রোগটি মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন পশু, বিড়াল, উট ও বাদুড়ের মধ্যেও দেখা যায়। সাধারণত প্রাণিদেহে সংক্রমিত করোনা ভাইরাসগুলি মানুষকে আক্রান্ত করে না। সম্প্রতি চীনের উহান নামক শহরে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত এই রহস্যজনক ভাইরাস বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। প্রায় চার লাখ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন এই প্রাণঘাতি ভাইরাসে।
এছাড়াও চীনে ভ্রমণজনিত কারণে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালী, ইরান, জাপান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, হংকং, মেকাউ, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, স্পেন ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
যেভাবে করোনা ভাইরাস ছড়ায়
বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, এই ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে খুব দ্রুত ছড়াতে পারে। করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় ও শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ হতে আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে যায়।
লক্ষণ সমূহ
১. জ্বর ও কাশি।
২. শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া।
৩. অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়।
৪. ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ৫ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি এবং এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।
ভ্রমণসংক্রান্ত পরামর্শ
যেহেতু এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস। এর ভয়াবহতা এবং বিস্তার সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জানা এখনও সম্ভব হয়নি, তাই ভ্রমণকালীন বিশেষ করে আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ থেকে আক্রান্ত দেশের ভ্রমণকারীগণ সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বাভাবিক শ্বাসতন্ত্রেও প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অথবা কিছুদিনের জন্য বেশি জরুরি কিছু না হলে ভ্রমণে বিরত থাকাই ভালো।
ভাইরাস থেকে বাঁচতে যা যা করতে হবে
# আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে হলেও দুই হাত দূরে থাকতে হবে।
# বারবার প্রয়োজনমতো সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে, বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা সংক্রমণস্থলে ভ্রমণ করলে।
# জীবিত বা মৃত গৃহপালিত/বন্যপ্রাণী হতে দূরে থাকতে হবে।
# ভ্রমণকারীগণ আক্রান্ত হলে কাশি শিষ্টাচার অনুশীলন করতে হবে (আক্রান্ত ব্যক্তি হতে দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, যেখানে-সেখানে কফ কাশি না ফেলা) ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাদি
# দেশের বিভিন্ন স্থল/নৌ এবং বিমানবন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্কতা ও রোগের সার্ভেল্যান্স জোরদার করা হয়েছে।
ঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ভাইরাস প্রতিরোধসংক্রান্ত গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে ও খুব দ্রুত যোগাযোগের জন্য আইইডিসিআরে মোট ৪টি হটলাইন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
হট লাইন নাম্বারসমূহ: +৮৮০১৯৩৭০০০০১১/ +৮৮০১৯৩৭১১০০১১/ +৮৮০১৯২৭৭১১৭৮৪/ +৮৮০১৯২৭৭১১৭৮৫ ১০.
# গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে অবহিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মাধ্যমে প্রেস ব্রিফিং করা হচ্ছে।
# সব জেলার সিভিল সার্জনদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য ও চিকিৎসার লক্ষ্যে প্রয়োজনে পৃথক ওয়ার্ড/বেডের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসা এবং শনাক্তকরণের জন্য গৃহীত কার্যক্রম
# দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউতে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
# ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
# আইইডিসিআর ল্যাবরেটরিতে এই ভাইরাস শনাক্তরকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
# WHO এবং US CDC-এর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চিকিৎসা ও ল্যাবরেটরি শনাক্তকরণে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
# আইইডিসিআর Corona Control Room খোলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণও করা হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে।
অতীতের মার্স করোনা ভাইরাস (MERS—CoV) এবং সার্স করোনা ভাইরাস (SARS—CoV) হতে বলা যায়, সামনের দিনগুলোতে আরও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। মানুষের ভৌগোলিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে যে কোনো সময়ে এই রোগ বাংলাদেশে প্রবেশ করার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এদেশে রোগটি যাতে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেতে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।