দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা কমবেশি সকলেই জানি ব্যাঙ্কে সেভিংস-এর বিষয়টি। তবে ঘুম সঞ্চয় কিংবা ‘স্লিপ ব্যাঙ্কিং’-এর বিষয়টি আমাদের অজানা। আজ জেনে নিন সেই বিষয়টি।

ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই আমরা অর্থ সঞ্চয় করে থাকি। সঞ্চিত সেই অর্থ প্রয়োজনমতো ব্যয়ও করি। একটু একটু করে টাকা জমানোর সবচেয়ে বড় সুবিধাই হলো, হঠাৎ করে আর্থিক পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। এই একই স্ট্র্যাটেজি ঘুমের ক্ষেত্রেও মেনে চলার কথা বলেছে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা। কাজের অত্যাধিক চাপ, সামাজিক কার্যকলাপ, পারিবারিক দায়দায়িত্ব, সিনেমা-সিরিজ় দেখার নেশা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ থাকাসহ আরও অসংখ্য কারণে দু’চোখের পাতা এক করার ফুরসত পাওয়া যায় না অনেক সময়। বিছানায় শুয়ে এ পাশ- ওপাশ করেও সাকুল্যে ২-৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমই হয় না। অপর্যাপ্ত ঘুমের হাত ধরে টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা, হৃদরোগ এমনকী ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে সাম্প্রতিক সময়। ঠিক সেই কারণে ঘুম সঞ্চয় করে রাখার বিষয়টিতে জোর দেওয়ার কথাও বলা হয়ে থাকে।
‘স্লিপ ব্যাঙ্কিং’ কী?
আমরা কমবেশি সকলেই জানি ব্যাঙ্কে সেভিংস-এর বিষয়টি। তবে ঘুম সঞ্চয় কিংবা ‘স্লিপ ব্যাঙ্কিং’-এর বিষয়টি আমাদের অজানা। স্লিপ ব্যাঙ্কিং-এর অর্থই হলো বেশি করে ঘুমিয়ে নেওয়া। একটু খোলাসা করে বলা যাক। অফিস থাকলে সকালে যে সময় ঘুম থেকে আপনি ওঠেন, ছুটিতে তার চেয়ে ১-২ ঘণ্টা পরে উঠুন। ফাঁকা সময় অন্য কোনও কাজের চাপ না থাকলে একটু ঘুমিয়ে নিতে হবে। চিকিত্সকরা বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। তবে কাজের চাপ, ব্যস্ততা ও সময়ে অফিস যাওয়ার তাড়ায়, ঘুমের এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না অনেক সময়। যে কারণে ঘুমের ঘাটতি তৈরি হতে পারে। তাই সময় পেলেই বেশি করে ঘুমিয়ে নেওয়াই দস্তুর। এ প্রসঙ্গে ‘ইনস্টিটিউট অফ স্লিপ সায়েন্স’-এর প্রধান সোমনাথ মাইতি বলেছেন, ‘সুস্থ থাকতে ৮-৯ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের দরকার। তবে অনেকের পক্ষেই সেটি সম্ভব হয় না। সেইক্ষেত্রে ‘স্লিপ ব্যাঙ্কিং’ বেশ কার্যকরী পন্থা হিসেবে বিবেচিত।’ পরীক্ষা, বড় কোনও অ্যাসাইনমেন্ট বা বেড়াতে যাওয়া থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমের একটা ঘাটতি তৈরি হতে পারে। তাই আগে থেকেই যদি একটু ২-৩ ঘণ্টা বেশি ঘুমিয়ে নেন, তাহলে ঘুমের ঘাটতি পূরণ হয়। অনিদ্রাজনিত শারীরিক সমস্যা থেকে রেহাইও পাওয়া যায়।’
স্লিপ ব্যাঙ্কিং কতটা কার্যকরী?
২০২৩ সালের ‘জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিন’-এ এই ‘স্লিপ ব্যাঙ্কিং’ সংক্রান্ত গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘুম সঞ্চয় করে রাখার কৌশল সত্যিই কাজে এসেছে। এই পন্থার কার্যকারিতা নিয়ে সোমনাথ মাইতি বলেন, ‘অক্সিজেন নেওয়া, খাবার খাওয়ার মতো ঘুম সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য। হরমোনাল ব্যালান্স ঠিক রাখা, নিয়ন্ত্রিত ওজন, সামগ্রিক ভাবে চাঙ্গা থাকা এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি-সহ এমন অনেক ফ্য়াক্টর উপর নির্ভর করে পর্যাপ্ত ঘুমের উপর। অপর্যাপ্ত ঘুমের হাত ধরে অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ‘স্লিপ ব্যাঙ্কিং’-এর বিষয়টি যদি কেউ মেনে চলতে পারেন, তা হলে সত্যিই উপকার পাওয়া যাবে।’ অফিসে বিভিন্ন সময়ে শিফট থাকে। শিফটের সময় অনুযায়ী, ঘুমের বিষয়টি ব্যালান্স করার কথা বলা হচ্ছে। খুব সকালে যদি শিফট থাকে, তা হলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। আবার অনেকেই নাইট শিফটে কাজ করেন। সেক্ষেত্রে ঘুমের ঘাটতি মেটাতে দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমিয়ে নিতে হবে।
স্লিপ ব্যাঙ্কিং-এর সঙ্গে অভ্যস্ত হবেন কীভাবে?
দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুম কতোটা অপরিহার্য, সেটি আগে গুরুত্ব দিয়ে আপনাকে বুঝতে হবে। তাহলে ঘুমের জন্য সময় বের করা অনেকটা সহজ হবে। এই বিষয়ে ভারতের ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ জানিয়েছে, ৭ হতে ৯ ঘণ্টার ঘুম জরুরি। ঘুমের দৈনিক মাত্রা পূরণ না হলে অন্যতম ভরসা রাখতে পারেন ‘স্লিপ ব্যাঙ্কিং’। এতে কী কী করণীয়?
# রাতে ঘুম কম হলে, চেষ্টা করুন দিনের অন্য সময় ঘণ্টা খানেক ঘুমিয়ে নেওয়ার জন্য।
# মানুষের জীবনে কাজ ও ব্যস্ততা থাকবেই। তবে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কমাতে ঘুমোতে হবে রুটিন মেনেই। তাই সপ্তাহে ৭ দিনের ঘুমের নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করতে হবে। এমনকী ছুটির দিনেও রুটিন মেনেই আপনাকে ঘুমোতে যান।
# গভীর ঘুমের জন্য চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। তাই ঘুমোনোর সময় ঘরে হালকা আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারেন। ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পূর্বে মোবাইল, ল্যাপটপের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org