দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক দম্পতির পেশাই হলো মামলা! এমন কথা শুনে যে কেও ভাবতে পারেন এটি আবার কেমন পেশা? কিন্তু বাস্তবে তাই ঘটেছে। এক দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে এই অনৈতিক কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তবে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।
এই দম্পতির নাম সবুজ মিয়া ও আসমা বেগম। তাদের বয়স ৪০ পেরিয়েছে। তারা এই পেশায় ভ্রাম্যমাণ। তারা আজ ঢাকায়, তো কাল থাকেন চট্টগ্রামে। কাল চট্টগ্রামে তো দুই দিন পর আবার নতুন কোনো জেলায়। এভাবেই মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কাটে তাদের জেলায় জেলায় ঘুরে। ঘুরে ঘুরে তারা মামলা সাজান বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সুকৌশলে। কখনও চুরির মামলা, আবার কখনও ধর্ষণ মামলা। স্ত্রী আসমা ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন, অপরদিকে স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেন। তাদের টার্গেট নির্দিষ্ট কিছু নয়। বিভিন্ন পেশা শ্রেণির মানুষ তাদের টার্গেট।
হোটেল বয় হতে শুরু করে হোটেল মালিক, বাড়ির দারোয়ান, বাড়ির মালিক এসব তাদের টার্গেট। এদের প্রত্যেকেই আসমাকে ধর্ষণ করেছেন এমন অভিযোগ করে বাদী হয়ে মামলা করেন তারই স্বামী সবুজ মিয়া। পাহাড় হতে সমতলে, সমানতালে মামলা করতে থাকেন এই দম্পতি। আসমা কেনো শুধু বার বার ধর্ষণের শিকার হন! এমন প্রশ্নের জবাবে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। এদের মামলা করার একটাই উদ্দেশ্য এরা মামলা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। এই দম্পতি মামলা করাটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
তবে সবকিছুরই শেষ আছে। তাই চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় এমন হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করতে গিয়েই প্রথমবার ধরা পড়েন তারা। ফাঁস হয়ে যায় তাদের মামলার নেপথ্য চাঞ্চল্যকর কাহিনী।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা পুলিশ বলেছে, সবুজ মিয়া এবং আসমা বেগম রীতিমতো ভয়ংকর এক দম্পতি। জেলায় জেলায় নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করাই তাদের একমাত্র পেশা। মাত্র কদিন আগের ঘটনা। একদিন বিকালে আসমা ও তার স্বামী যান কোতয়ালি থানাতে। থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন নগরীর লালদীঘি এলাকার একটি হোটেলের বয় তার স্ত্রী আসমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। তবে তাদের অভিযোগের সঙ্গে মুখের কথায় বেশ গড়মিল খুঁজে পান পুলিশ কর্মকর্তারা। তাতেই সন্দেহ হয়।
এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তারা শিকার করেন তাদের ভয়ংকর প্রতারণার কল্প কাহিনী। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এই দম্পতি জানিয়েছেন যে, তারা এমন ভয়ংকর প্রতারণা করে আসছেন সেই ২০০৫ সাল হতে! তারা প্রথমে মধ্যম মানের হোটেলে গিয়ে ওঠেন। সেখানে বাইরে বেরোনের কথা বলে চাবিটি ম্যানেজারের কাছে দিয়ে যান।
তারপর এসেই অভিযোগ করে বসেন, তাদের রুমে নগদ টাকা রাখা হয়েছিল, তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে হোটেল কর্তৃপক্ষ মালিকের মধ্যস্থতায় টাকার বিনিময়ে আপস-রফা করে ফেলেন। তবে আপসে না আসলে সেই হোটেলের মালিক বা বয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলেন তারা। মামলা করেন থানায়। এরপর আদায় করেন মোটা অঙ্কের অর্থ।
কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে, এই দম্পতির প্রতারণামূলক মামলার সন্ধান পাওয়া যায় ঢাকা, বাগেরহাট, নেত্রকোনা এবং রাঙামাটিসহ বিভিন্ন জেলাতে। প্রত্যেক জেলা হতে মামলা করে প্রত্যেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। গত ৬ মাস পূর্বে চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের একটি হোটেল হতে একই কায়দায় ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।
এক জেলাতে খুব বেশি মামলা করলে সন্দেহ হতে পারে, তাই তারা এক জেলায় বেশি দিন থাকেনও না। চট্টগ্রামেও বেশি দিন থাকার পরিকল্পনা ছিল না তাদের। দু-একটি মামলা করেই অন্য জেলায় সটকে পড়ার পরিকল্পনা ছিল এই প্রতারক দম্পতির। প্রতারণার অভিযোগে এই দম্পতিকে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ।