দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে ব্যস্ত জীবনযাপনের মধ্যে অনেকেই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন। ওজন নিয়ন্ত্রণ করা শুধু শারীরিক সৌন্দর্য নয়, বরং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সচেতন ডায়েট মেনে চললে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে কোন কোন খাবার ডায়েটে রাখা উচিত, তা জানা জরুরি।
শাকসবজি ও ফলমূল ডায়েটে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পালং শাক, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, আপেল, কমলা ও কলার মতো খাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এগুলোতে ক্যালরি কম এবং আঁশ বা ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে। এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরকে পুষ্টি জোগায়।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ডায়েটে রাখা জরুরি। ডাল, মুরগি, মাছ, ডিম ও সোয়া প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিন দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং মেদ পোড়াতে সাহায্য করে। সকালের নাশতায় বা মধ্যাহ্নভোজে প্রোটিন যুক্ত খাবার রাখলে দিনজুড়ে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে।
সম্পূর্ণ শস্য বা হোল গ্রেইন ডায়েটে রাখা প্রয়োজন। ব্রাউন রাইস, ওটস, হোল হুইট ব্রেড ও কুইনোয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এগুলোতে ফাইবার থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হঠাৎ ক্ষুধা অনুভূতি কমায়।
কম ক্যালরির দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার উপকারী। লো-ফ্যাট দুধ, দই বা চিজ ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত দুধ বা প্রসেসড দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করা দরকার। অ্যাভোকাডো, বাদাম, চিয়া সিড, অলিভ অয়েল ও ফ্যাটি ফিশের মতো খাবারে ভালো চর্বি থাকে। এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে।
পানি ও হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের মেটাবলিজম ঠিক থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে। চা-কফি ও মিষ্টি পানীয়ের বদলে শুদ্ধ পানি বা লেবুর পানি গ্রহণ করা ভালো।
ফাস্টফুড, অতিরিক্ত চিনি ও প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলা ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চললে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
সঠিক খাদ্য নির্বাচন, পরিমিত পরিমাণে খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব এবং সুস্থ, সক্রিয় জীবনধারা বজায় রাখা সহজ হয়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org