দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মালয়েশিয়ার বিমানের আকস্মিক নিখোঁজের ফলে আবারো বিমানের রহস্যময় নিখোঁজের বিষয়টি সামনে চলে আসছে। ইতিহাসে এইরকম কতগুলো বিমান দুর্ঘটনা এবং নিখোঁজের কাহিনী রয়েছে যার সমাধান আজো হয়নি। মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্সের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি। এটি নিখোঁজ কিংবা বিধ্বস্ত হতে পারে। এখানে ইতিহাসের ৭টি রহস্যময় বিমান নিখোঁজ ও দুর্ঘটনার বর্ণনা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
১. পৃথিবী প্রদক্ষিনকালে অ্যামিলিয়া ইয়ারহার্টের নিখোঁজ
আমেরিকার বিমানচালনার পথপ্রদর্শক অ্যামিলিয়া ইয়ারহার্ট ১৯৩৭ সালে ২ জুলাই পৃথিবী প্রদক্ষিনকালে তার নেভিগেটরসহ নিখোঁজ হন। তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা বিমানচালক যিনি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের কাছাকাছি হাউল্যান্ড দ্বীপে এটি নিখোঁজ হয়ে যায়। অ্যামেচার গবেষকদের মতবাদ তার বিমানের জ্বালানী শেষ হয়ে যাওয়ায় এটি বিধ্বস্ত হয়। অন্যদের মতবাদ তিনি ফ্রাঙ্কলিন ডি রজবেল্টের গুপ্তচর ছিলেন বিধায় তাকে জাপানের সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছে। অন্যরা বলে থাকেন তিনি বিমান নিয়ে জাপানের কোন দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়েছেন। আর সবচেয়ে মজার তথ্যটি হলো এলিয়েনরা তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত এর সঠিক কারণ পাওয়া যায়নি।
২. বৈমানিক গ্লিন মিলারের বিমান ইংলিশ চ্যানেলে নিখোঁজ
গ্লিন মিলার ছিলেন ইউএস এয়ারফোর্সের বিগ ব্যান্ড পদক প্রাপ্ত একজন বৈমানিক। ১৯৪৪ সালের গ্রীষ্মে তিনি প্যারিসে বিমানবাহিনীর বার্ষিক প্রদর্শনীতে ছিলেন। ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৪৪ সালে তিনি প্যারিস থেকে আকাশে উড়াল দেন এবং ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময় নিখোঁজ হন। তার এই নিখোঁজ হওয়া নিয়ে অনেক গালগল্প প্রচলিত ছিল। কেউ কেউ বলেন জার্মান বোম্বাররা তার বিমান ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে মজার মতবাদটি দেন একজন জার্মান সাংবাদিক। তিনি একটি জার্মান পত্রিকায় লিখেন মিলার বেঁচে ছিলেন শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান প্যারিসের একটি পতিতালয়ে। এখন পর্যন্ত তার নিখোঁজের কারণটি অজানা।
৩. ফ্লাইট ১৯ এবং বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল
১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর বিকেলবেলা। ইউএস নৌবাহিনীর বিমান ডিভিশনের ট্রেনিং সেশন চলছিল সেদিন। বিকেলবেলা ফ্লোরিডার মাটি থেকে আকাশে উড়লো একে ছয়টি বিমান কিন্তু ফিরে আসলো না একটিও। জন্ম নিলো এক অবিশ্বাস্য রহস্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল। এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে শেষ হওয়ার কথা এই সেশন। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বৈমানিকদের আপডেট ছিল তারা সামনে ঘন বায়ুস্তর ছাড়া কিছুই দেখছে না এবং তাদের কম্পাস অনবরত ঘুরছে, কোন দিক নির্দেশ করছে না। প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য তাদের নৌবাহিনী থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। সেই ছয়টি বিমান এবং তাদের বৈমানিকদের আর খুজে পাওয়া যায়নি।
বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে আরো পড়ুনঃ অ্যামেরিকার বিমান থেকে ভুল ক্রমে নিজ দেশে বোমা নিক্ষেপণ
৪. স্টার ডাস্ট এবং রহস্যময় মোর্স কোড
১৯৪৭ সালের আগস্টের ২ তারিখ আর্জেন্টিনার বুয়েন্সইয়ারস থেকে চিলির সান্তিয়াগোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বিএসএএ স্টারডাস্ট নামের একটি যাত্রীবাহী বিমান। যাত্রার কিছুক্ষণ পরেই বৈমানিক জানায় আকাশে স্টারডাস্টের সর্বশেষ খবর। এরপর কন্ট্রোল টাওয়ারের রেডিওতে আসে একটি রহস্যময় মোর্স কোড “STENDEC” তারপর নিখোঁজ হয়ে যায় বিমানটি। কি ঘটে ছিল সেই বিমানের ভাগ্যে তা আজো অজানা। ধারনা করা হয় বরফাচ্ছাদিত পর্বতের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বরফ ধসে বিধ্বস্ত হয় এবং বরফ চাপা পড়ে।
৫. বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে স্টার টাইগার প্লেনের নিখোঁজ
চিলির সান্তা মারিয়া থেকে এরপর রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হয় বিএসএএ গ্রুপের স্টারটাইগার নামের একটি বিমান। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারী ২৫ জন যাত্রী নিয়ে আকাশে উড়ে বিমানটি, এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম নায়ক স্যার আর্থার কোনিংহাম ছিলেন। বিমান প্রতিকূল আবহাওয়ায় বাতাসের বাধা এড়িয়ে কিছুটা নিচু হয়ে উড়ছিল। এটি মূলত বারমুডা গন্তব্যই যাচ্ছিল। কন্ট্রোল টাওয়ারে দেখা যাচ্ছিল বিমানটি নিরাপদে গন্তব্যে পৌছে গিয়েছে কিন্তু সেই যাত্রায় ছিল তার অন্তিম যাত্রা। এরপর বিমানটি আর খুজে পাওয়া যায় নি।
৬. রহস্যময় বিমান নাম্বার ১৯১
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানের ইতিহাসে ১৯১ নাম্বারটা একটা দুর্যোগের নাম। ১৯৭৯ সালে ফ্লাইট ১৯১ উড্ডয়নের মিনিট খানিক পর বিধ্বস্ত হয়। মারা যায় ২৫৮ জন যাত্রী এবং ১৩ জন ক্রু। পাইলটের মৃত্যুর কারণে এক্স-১৫ ফ্লাইট ১৯১ নামের পরের বিমানটিও উড়ার কিছুক্ষণ পর বিধ্বস্ত হয়। মারা যায় অনেক যাত্রী। এমনকি ২০১২ সালের জেটব্লু এয়ারওয়ে ফ্লাইট ১৯১ উড়ার মুহূর্তে পাইলট স্ট্রোক করে একে কোন রকমে বিধ্বস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।
৭. ফ্লাইট ৫৭১ এর আন্দিজ পর্বতের দুর্যোগ
উরুগুয়ান এয়ারফোর্সের চার্টার বিমান ৪৫ জন যাত্রীসহ খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে যাত্রা শুরু করে আন্দিজ পর্বতের উপর দিয়ে। যাত্রার প্রায় আধা ঘণ্টা পর বিধ্বস্ত হয় আন্দিজ পর্বতমালায়। বিধ্বস্তের সাথে সাথেই মারা যায় ১২জন যাত্রী। পরদিন মারা যায় আরো ছয়জন। ৮ জন প্লেন দুর্ঘটনার স্থান থেকে হাঁটতে থাকে লোকালয়ের উদ্দেশ্যে। বাকী ১৬ জন বেঁচে থাকার চেষ্টা করে নরমাংসভক্ষণের মাধ্যমে। ৭২ দিন পর্যন্ত তাদের কেউ খুজে পায় নি। বেঁচে থাকে মাত্র দুইজন যাদের খুজে পায় একজন গ্রাম্য ফেরিওয়ালা। সে কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়।
এছাড়াও বিএসএএ গ্রুপের আরেকটি ফ্লাইট স্টার এরিয়াল নামের একটি বিমান ১৯৪৯ সালে বারমুডা থেকে জ্যামাইকা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ আজীবনের জন্য বিএসএএ স্টার গ্রুপের সব বিমান বন্ধ করে দেয়। এই হলো বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসের সাতটি রহস্যময় ঘটনা যেসব ঘটনার আজো কোন সুরাহা হয়নি। কিংবা জানা যায়নি পরবর্তীতে কি ঘটেছিল বিমানগুলোর ভাগ্যে।
তথ্যসূত্রঃ মিরর