দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রয়াত চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর চলচ্চিত্রে উচ্চমানের শিল্পবোধের স্বাক্ষর যে রেখেছেন, তা নিয়ে দ্বিমত নেই কারো। আর তাই তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে কলকাতায় তাঁর অনবদ্য সংগ্রহ নিয়ে জাদুঘর নির্মিত হতে যাচ্ছে।
শিল্পবোধ ও রুচির স্পষ্ট ছাপ ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের জীবনযাপনেও। তিনি ছিলেন বইয়ের পোকা। শিল্প-সাহিত্যের দুর্লভ ও মূল্যবান সব বইয়ে ঠাসা ছিল তাঁর ঘরগুলো। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ঋতুপর্ণের স্মরণে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার চিন্তা করছে। তাতে ঋতুপর্ণ ও তাঁর সংগ্রহে থাকা চলচ্চিত্র, বই, চিত্রকর্ম, সংগীত ও ব্যবহার্য নানা সামগ্রী স্থান পাবে।
কলকাতায় গত সপ্তাহে ঋতুপর্ণের স্মরণে এক সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেন ঋতুপর্ণের পৈতৃক বাড়িতে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি দেন। মমতাও প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। সভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখার্জি প্রমুখ।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, পৈতৃক বাড়ি ছাড়াও কলকাতায় ঋতুপর্ণের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। তিনটি বাড়িই তিনি সাজিয়েছেন নিজের রুচিমতো। এসব বাড়িতে কয়েক হাজার মূল্যবান বই, চিত্রকর্ম, অলংকার, ল্যাম্পশেডসহ লাখখানেক মনিহারি সামগ্রী আছে। এর মধ্যে নিজের ঘড়ি, সানগ্লাস, চীনা মাটির বাসনকোসন, শাল, রুমাল, স্কার্ফও আছে। পুরনো ঐতিহাসিক ঢংয়ের জিনিস সংগ্রহের প্রতি তাঁর সব সময়ই একটা আলাদা টান ছিল। তাঁর সংগ্রহে থাকা এসব জিনিসপত্রের দাম কয়েক কোটি রুপি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্মরণ সভায় ঋতুপর্ণের সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের অনেকেই বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে ঋতুপর্ণের শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ ড. নৃসিংহ প্রসাদ বলেন, ‘ওর ঘরের দেয়ালজুড়ে বইয়ের তাক আর তাক। কয়েক হাজার বই আছে। কিন্তু এর একটাকেও কখনো অগোছালো দেখা যায়নি।’
ঋতুপর্ণকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানো সঞ্জয় নাগ জানান, রবীন্দ্রনাথের অসম্ভব ভক্ত ছিলেন ঋতুপর্ণ। যেকোনো বাঙালি পরিবারেই রবীন্দ্রনাথের বই সংগ্রহে থাকা একটা গর্বের বিষয় হিসেবে ভাবা হয়। কিন্তু ঋতুপর্ণ সংগ্রহ করতেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের সমালোচনামূলক গুরুত্বপূর্ণ সব বই। তাঁর আরেকটি পছন্দ ছিল ‘মহাভারত’, তিনি এ মহাকাব্যের ওপর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই সংগ্রহ করেন। পরেশ মাইতি, যোগেন চৌধুরী ও শুভপ্রসন্নের মতো বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম আছে তাঁর বাড়িতে। বুদ্ধের ওপর আঁকা নানা চিত্রকর্ম, মুখোশসহ অন্যান্য জিনিসও তিনি সংগ্রহ করেছেন ভারতের নানা জায়গা ও দেশের বাইরে থেকে। ২০১১ সালে তিনি স্পেন থেকে কিছু কাচের গ্লাস নিয়ে আসেন। তিনি ওই গ্লাস ও বোতলে নিজের হাতে চিত্রকর্ম তৈরি করেন। টেবিল, চেয়ার, খাটসহ ঘরের আসবাবপত্রেও রয়েছে তাঁর উন্নত ও ধ্রুপদী রুচির ছাপ। জানা যায়, চিত্রাঙ্গদা ও আবহমান চলচ্চিত্রে এসব সামগ্রীর কিছু ব্যবহৃতও হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘এসব জিনিসপত্র সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরাও তাঁর কাজ নিয়ে গবেষণা করতে পারবে।’
উল্লেখ্য, গত ৩০ মে ৪৯ বছর বয়সে মারা যান প্রখ্যাত এই চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ। তাঁর অনবদ্য নির্মাণ শৈলি শুধু চলচ্চিত্রই নয়- বাঙালিদের সংস্কৃতি অঙ্গনে সকল ক্ষেত্রে চিরদিন অমর হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু